ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানাতে উদাসীনতা
বাংলাদেশ

ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানাতে উদাসীনতা

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) ও শহরের ৩০০ শয্যার খানপুর হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানাতে উদাসীনতা দেখা গেছে। জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও এ নিয়ে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে দেখা দেছে মশারির বাইরে বিছানায় বসে আছেন ডেঙ্গু রোগীরা।

এদিকে, জেলায় বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত মাসে ১৫২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলার এই দুই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসকদের নির্দেশনা মোতাবেক মশারি ব্যবহার করছেন না। ফলে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া খানপুর হাসপাতালে জলাবদ্ধতার ফলে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আট, ফেব্রুয়ারিতে চার, মার্চে তিন, এপ্রিলে দুই, মে-তে ছয়, জুনে তিন, জুলাইয়ে ছয়, আগস্টে ১৭ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৯১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। সব মিলিয়ে চলতি বছরে ভর্তি হয়েছেন ১৪০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

খানপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে ৬১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও ১৩ রোগী ভর্তি আছেন। বাকি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের খানপুর হাসপাতালের রোগীদের কেউ মশারি ব্যবহার করছেন না। হাসপাতালের নিচে জলাবদ্ধতা রয়েছে। সেখানে এডিস মশা জন্মাতে পারে বলে রোগীদের আশঙ্কা। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের রোগীরাও নানা অজুহাত দেখিয়ে মশারি টানাচ্ছেন না।

খানপুর হাসাপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শহরের বাসিন্দা রহিমা বেগম। এ সময় তার চোখে পড়ে হাসপাতালের নিচে জলাবদ্ধতার বিষয়টি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা জন্মাবে। এতে ডেঙ্গু রোগ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। অথচ এখানে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চার দিন ধরে খানপুর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন আরিফ হোসেন। মশারি ব্যবহার না করার বিষয়ে অজুহাত দেখিয়ে আরিফের মা সাবিনা আক্তার বলেন, ‘চার দিন ধরে হাসপাতালে আছি। এখন ছেলের শরীরের অবস্থা ভালো। তবে গরম অনুভব করার মশারি খুলে রেখেছি।’

একই ওয়ার্ডের রোগী শাহীন আলমের বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘তীব্র গরম। সিলিং ফ্যান থাকা সত্ত্বেও গরম বেশি অনুভব হচ্ছে। এ ছাড়া ভাত খাওয়ানোর সময় মশারি থাকলে বিরক্ত লাগে, তাই খুলে দিয়েছি।’

তবে ওয়ার্ডবয় আরিফ হোসেন বলেন, ‘রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা ওয়ার্ডে আসলে মশারি খুলে ফেলা হয়। এ ছাড়া নানা অজুহাতে তারা মশারি টানাতে চান না। এ নিয়ে রোগী স্বজনদের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় আমাদের।’

মশারি ব্যবহার না করার ভয়াবহতা উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক সাবিকুন নাহার বৈশাখী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। এটা সিটি করপোরেশনের কাজ। এরপরও আমাদের সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গুর চারটা ধারণ রয়েছে। একবার যার ডেঙ্গু হয়েছে। তাকে যদি টাইপ টু-এর মশা কামড় দেয় সেটা আরও খারাপ হবে। এজন্য ২৪ ঘণ্টা মশারির মধ্যে রোগীকে থাকার জন্য বলা হয়। পরবর্তী ধাপে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তা ভয়াবহ হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীকে পুনরায় এডিস মশা কামড় দিলে পরবর্তী ধাপে সমস্যা বাড়ে। সে কারণে মশারির নিচে থাকতে হবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. জহিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আসলে ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকা, সচেতন হওয়া, মশারি ব্যবহার করা ও চিকিৎসাসেবা নেওয়া অপরিহার্য। এর বিকল্প নেই।’ 

রোগীদের মশারি ব্যবহার না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে সচেতনতার অভাবে হচ্ছে। আমরা রোগীদের বারবার সাবধান করার পরও নানা অজুহাতে তারা মশারি খুলে রাখছেন। এতে করে রোগীরা নিজেরা যেমন ঝুঁকিতে পড়ছেন, এমনকি তার আশেপাশের লোকজনকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন।’

জানতে চাইলে খানপুর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত মাসে ৬১ জন রোগী ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এখনও ১৩ জন ভর্তি আছেন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে রোগীদের সব সময় মশারি ব্যবহার করতে বলা হয়। নানা কারণ দেখিয়ে রোগীরা মশারি খুলে ফেলছেন। এক্ষেত্রে রোগী থেকে চিকিৎসকের মাঝেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’

হাসপাতালে জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‌‘একটি ড্রেনের কাজ করার সময় ব্লক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেই পানিতে ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হয়। যাতে ডেঙ্গুসহ অন্য কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব না ঘটে। ময়লা পানিতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিলে ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য স্বচ্ছ পানির প্রয়োজন। তবু আমরা শিগগিরই ওই পানি অপসারণ করবো।’

Source link

Related posts

নতুন করে কি ঘটতে পারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ?

News Desk

সমগ্র বাংলাদেশকে রেলওয়ের আওতায় নিয়ে আসছি – প্রধানমন্ত্রী

News Desk

বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার ৭ কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু

News Desk

Leave a Comment