নীলফামারীতে পুঁই শাক, পাট শাক, কচু শাক, কলমি শাক, ধুনেপাতা, চিচিঙ্গা, বরবটি, আদা, হলুদ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজির দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস সেই মুহূর্তে আলোচনায় এসেছে কাঁচা মরিচ। বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে দুই, তিনগুণের বেশি।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে জেলা শহরের কিচেন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি মরিচ ১৪০ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে দোকানদাররা বিক্রি করছে ১৬০ টাকায়। কেজিতে ক্ষুদ্র ভোক্তাদের কাছে ২০ টাকা বেশি নিচ্ছে। বর্তমানে মরিচের বাজার দরে অতিষ্ঠ ক্রেতারা। কেউ কেউ কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনো মরিচের গুড়া বা প্যাকেট কিনছেন। আবার শুকনা মরিচ প্রকারভেদে ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে কিনতে বাদ্য হচ্ছে ভোক্তারা।
ওই বাজারে দেখা হয় কৃষি শ্রমিক ও সবজি ক্রেতা ওসমান গনির (৫৫) সঙ্গে। তিনি জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল নাই। সারাদিন ইনকাম হয় ৩০০ টাকা। তাও কাজ কোনদিন হয়, কোনদিন হয় না। তাহলে গরিব মানুষের বাঁচার উপায় কী? তিনি বলেন, আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, মরিচ পেঁয়াজ আদা, হলুদ বরবটি, পটলসহ সব কিছুর দামই বেশি। একটু বৃষ্টি নামলেই ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেয় আজ মরিচের আমদানি নাই। তাই মরিচসহ প্রত্যেকটি কাঁচামালের দাম বেড়েছে।
পৌর শহরের নিউবাবুপাড়ার রশিদুল ইসলাম (৪৫) বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা চড়া দামে এসব পণ্য বিক্রি করছে।
এদিকে, হাটবাজার মনিটারিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম জানান, খুব শিগগরিই বাজার দর স্থীতিশীল রাখতে অভিযান চালানো হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ করা হয়েছে। প্রথম দিকে আবহাওয়া একটু খারাপ হলেও পরে স্বাভাবিক হয়, ফলে মরিচের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তারপরেও কারণ-অকারণে কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করছে।
কিচেন মার্কেটের আড়ৎদার বুলবুল আহমেদ জানান, আগে বগুড়া ও দিনাজপুর থেকে আমাদের এখানে কাঁচা মরিচ আসতো। কিন্ত চলতি বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য জেলাসহ স্থানীয় মরিচ চাষিদের ক্ষেতে গাছ মরে যাওয়ায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইকারি প্রতিকেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে শুনছি, খুচরা বাজারে নাকি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই কথা জানান, আড়ৎদার আনোয়ার হোসেন। তারা আরও জানান, অনেক ব্যবসায়ী আগেই কৃষকের কাছে মরিচ ক্ষেত কিনে নেন। পরে সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে আড়তে বিক্রি করেন।
নীলফামারী বড় বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবু তাহের ও বুলু মিয়া জানান, ‘আড়ৎদাররা মরিচ সাপ্লাই দিতে পারছে না। তাই বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও মরিচ বাসি হলে পচে যায় এবং ওজনে কম হয়। ফলে বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার বেশি হওয়ায় ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কিনছেন না। অনেকেই প্যাকেটের গুড়া মরিচ কিনছে।’
ম্যাসে রান্না করার কাজে মরিচ কিনতে আসা শহরের আলেয়া বেগম জানান, ‘মাছ, মাংস রান্নায় কাঁচা মরিচের দরকার হয়। তরকারীর স্বাদও ভালো হয়। কিনতে এসে দেখি, এককেজি চালের দামের চেয়ে এককেজি মরিচের দাম তিনগুণ বেশি। তাই কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনা মরিচের গুড়া কিনলাম।’
জেলা সদরের চওড়াবড়গছা ইউনিয়নের কাঞ্চন পাড়া (ড্যাপের ডাঙ্গা) গ্রামের মোনতাজ আলী ও এনতাজ আলী (৪৫) জানান, বৃষ্টি ও গরমের কারণে অনেক মরিচ গাছ ক্ষেতে নষ্ট হয়েছে। গাছ মরে যাওয়ায় ফলন নাই। যারা আদার ক্ষেতে মরিচ লাগিয়েছে, শুধু তারাই একটু ফলন পাচ্ছে। এই জন্য বাজারে মরিচের আমদানি নাই। ফলে দামও অনেক বেশি।
জেলা হাট বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম খান জানান, আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় মরিচের উৎপাদন কমেছে। ফলে দাম একটু বেশি। তবে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।