নাসরিনকে নিয়ে যত আলোচনা 
বাংলাদেশ

নাসরিনকে নিয়ে যত আলোচনা 

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার পর থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। বিশেষ করে এরপর কীভাবে সিনিয়র নেতাদের নাসরিনের পরের পদ দেবেন, তারা সেই পদ গ্রহণ করবেন কিনা; বিষয়গুলো নিয়ে জেলার নেতাদের মধ্যে চলছে আলোচনা। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকেও পোস্ট দিয়েছেন কেউ কেউ।

গত ৭ জুলাই দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর বিএনপির তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক। তবে সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে পদোন্নতি দিয়ে সদস্যসচিব করা হয়েছে। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রদল নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিনকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তবে ঘোষিত কমিটি নিয়ে ‍আলোচনা-সমালোচনা হলেও ‍তাদের নিয়ে নগরীতে ‍আনন্দ মিছিল করেছে ‍বিএনপি।

কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে নিয়ে আলোচনা না থাকলেও ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ককে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থাকলেও বয়স বিবেচনায় তাকে ওই পদ দেওয়া ঠিক হয়নি বলছেন দলের অনেক সিনিয়র নেতা। তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে মহানগর যুবদলের এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘নাসরিন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়। শুধু আন্দোলনে নয়, দলীয় প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ আছে। একাধিকবার গ্রেফতারের পাশাপাশি পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এগুলো কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো আমরাও স্বীকার করি। তবে বয়স বিবেচনায় এখনই তাকে এত ওপরের পদ দেওয়া ঠিক হয়নি। কারণ জেলায় আরও অনেক সিনিয়র নেতা রয়েছেন। তাদেরও দলের জন্য অবদান আছে। ওই পদে তাদের কাউকে দিলে সমালোচনা হতো না। নাসরিনকে সিনিয়র নেতাদের পরের যেকোনো পদে দিলেই হতো।’

একই কথা বলেছেন মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এখন আমার যে বয়স, তাতে কোন পদে আমাকে রাখবেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এটাই আমার প্রশ্ন।’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য আরিফুর রহমান বাবু। নিজের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করেছেন, ‘কেন্দ্রীয় বিএনপি দুঃখজনকভাবে মহানগর বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকা সিনিয়র নেতাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। একজনের জন্য সংগঠনের এত বড় ক্ষতি নেতাকর্মীদের কাছে কাম্য নয়। সংগঠনের স্বার্থে এই কমিটি পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলন-সংগ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। সেক্ষেত্রে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ককে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। আমরা চেয়ারম্যানের প্রতি আস্থা রেখে এই কমিটির মাধ্যমে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’

এই কমিটি নিয়ে অভিমান আছে মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক আলী হায়দার বাবুলের। তবে এই অভিমান লুকিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বাবুল বলেন, ‘শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। আমৃত্যু বিএনপির রাজনীতি করবো। এই রাজনীতি করতে গিয়ে ৩৭ বার জেলে গিয়েছি। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের আমলে ১২ বার। পদের জন্য রাজনীতি করি না। এর আগে ১০ বছর কোনও পদে ছিলাম না। দলের কর্মী হয়ে থাকতে চাই। আমার কোনও অভিমান নেই।’

কমিটি নিয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম শাহিন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনে আরেকটু সচেতনতার প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের।’ এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই পোস্টে সব প্রশ্নের উত্তর আছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে পুলিশের নির্যাতন উপেক্ষা করে যারা মাঠে ছিলেন, তাদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। সেখানে কার নিচে কে রাজনীতি করবে, কে করবে না; সেটা প্রাধান্য পাচ্ছে না। প্রাধান্য পাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে কার কতটুকু ভূমিকা ছিল এবং আছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও একইভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের ভূমিকা ছিল এবং আগামীতে আন্দোলনে যারা মাঠে থাকবেন, তাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।’

আলোচনা-সমালোচনার জবাবে আফরোজা খান নাসরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। দলের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম, এখনও আছি। আন্দোলন করতে গিয়ে ৯ বার গ্রেফতার হয়ে সাড়ে তিন বছর জেল খেটেছি। পুলিশের নির্যাতনে মেরুদণ্ড ও হাঁটুতে আঘাত পেয়ে ছয় মাসের বেশি সময় প্রিজন সেলে ছিলাম। কোনও চিকিৎসা পাইনি। পঙ্গুত্ব বরণ করতে যাচ্ছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এখনও ভাঙা মেরুদণ্ড ও হাঁটুর ব্যথা নিয়ে রাজপথে আছি। যারা সমালোচনা করছেন, দলের জন্য তাদের কী অবদান আছে তারাই জানেন।’

আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকা ও বরিশালে আমার বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে নাসরিন আরও বলেন, ‘এর মধ্যে ঢাকায় সাতটি এবং বরিশালে ৩৭টি মামলা চলমান। রাজপথে থাকার কারণে আমার বাড়িতে একাধিকবার পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তাতেও রক্ষা মেলেনি। সবকিছু মাথায় নিয়ে এখনও দলের জন্য, দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি এবং লড়ে যাবো। আমি যে পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হয়েছি, বরিশালের কোনও সিনিয়র নেতা সেভাবে হয়েছেন বলে মনে হয় না।’

নাসরিন আরও বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চারটি বিভাগে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। সেখানে নির্যাতিতদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় অনেক সিনিয়র নেতাকে পেছনে ফেলে আন্দোলনে থাকা জুনিয়র নেতারা পদ পেয়েছেন। তবে আগে আর পেছনের কোনও বিষয় নেই। আমাদের কাজ হলো সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া। আমি আশা করছি, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কমিটি মেনে নিয়ে আমাদের সামনের দিকে পথচলায় ভূমিকা রাখবেন। আমরাও তাদের সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে চেয়ারম্যানের ঘোষণাকৃত কর্মসূচি সফলের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং সরকারকে হটিয়ে দেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে ‍দেবো।’

Source link

Related posts

সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন

News Desk

ভারত থেকে এলো আরও দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস ডিম

News Desk

‘১৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ফেরিতে উঠতে পারিনি’

News Desk

Leave a Comment