টেকনাফ থেকে পায়ে হেঁটে পঞ্চগড় পৌঁছেছেন তরুণ উদ্যোক্তা এস মুরাদ জুবায়েদ (৩৫)। শুক্রবার (২৫ মার্চ) পঞ্চগড়ে পৌঁছান তিনি। শনিবার (২৬ মার্চ) তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে পৌঁছেছেন। সেখানে তার পদযাত্রা শেষ হয়।
এর আগে ৭ মার্চ মুরাদ টেকনাফ থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। পায়ে হেঁটে যাত্রার ১৯তম দিনে তিনি পঞ্চগড়ে পৌঁছান। ২০তম দিনে তেঁতুলিয়ায় পদযাত্রা শেষ করেন।
মুরাদের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মুহুরীগঞ্জ এলাকায়। তিনি ওই এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে। মুরাদ গাজীপুরের টঙ্গীতে বসবাস করেন। টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছেন। টঙ্গীতে অক্সিজেন নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হস্তশিল্প, চারু ও কারুকলা ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন মুরাদ।
তরুণ উদ্যোক্তা মুরাদ জুবায়েদ বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত। বাবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতির কথা শুনেছিলাম। সেই থেকে বুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করি। এই লক্ষ্যেই আমি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। যার জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। আমার এই যাত্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করছি।
মুরাদ জুবায়েদ জানান, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। গাছ কেটে নয়, গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান, একে অন্যের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করি, বনভূমি উজাড় নয় বরং বনভূমি তৈরি করি, পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা করি, প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা দেশের জন্য সময় ব্যয় করি। দেশকে ভালোবাসি, বর্ণবাদ না, যুদ্ধ না, আত্মহত্যা না, ধর্ষণ না, প্রতারণা না, অশ্লীলতা না, মানব পাচার না, অসততা না, অপরাধ না এমন ২০টিরও বেশি বিষয় নিয়ে পদযাত্রা করেছি।
মুরাদ জুবায়েদ আরও জানান, অ্যাথলেট না হওয়ায় প্রথম দিকে হাঁটতে আমার বেশ কষ্ট হয়েছে। পরে আমি মানিয়ে নিয়েছি। তবে আমার পায়ে ফোসকা পড়েছে। পা ব্যথা করছে। তবু আমি পদযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছি। মিশন শেষ করেছি, এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নেবো।
মুরাদ আরও জানান, পায়ে হেঁটে আসার নানা স্মৃতি, প্রতিবন্ধকতা ও গল্প রয়েছে। পথিমধ্যে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছি। এসব বিষয়ে তাদের যেমন অবহিত করেছি, তেমনি তারাও সচেতন হবেন এবং করবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মুরাদ মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে হাঁটছেন। টি-শার্টের সামনে লেখা রয়েছে ওয়ার্ক ফর পিচ। পেছনে লেখা রয়েছে ওয়ার্ক ফর পিচ, নো সুইসাইড। তার পেছন পেছন আসছে একটি পিকআপ। পিকআপের ওপরে একটি ঘর। রাত্রিবেলায় সেই ঘরেই থাকেন মুরাদ। তার এই ঘরটি দেখতে অনেকে ভিড় করেছেন।