পুলিশের হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু, এবার চান্দগাঁও থানার পরিদর্শককে বদলি
বাংলাদেশ

পুলিশের হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু, এবার চান্দগাঁও থানার পরিদর্শককে বদলি

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা পুলিশের হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর (৬৪) মৃত্যুর ঘটনায় ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে বদলি করা হয়। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপির এডিসি পিআর স্পিনা রানী প্রামাণিক।

শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার বিকালে মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলা করেন তার স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার। মামলায় চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল ইসলামসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক মনিবুর রহমানকেও আসামি করা হয়। অপর আসামিরা হলেন—চান্দগাঁও থানার এএসআই মো. ইউসুফ, এএসআই সোহেল রানা, চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা এসএম আসাদুজ্জামান, মো. জসীম উদ্দিন, মো. লিটন, রনি আক্তার তানিয়া ও কলি আক্তার। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে করা মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

এডিসি পিআর স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, ‘চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমানকে বদলি করে উপ-পুলিশ কমিশনারের (পশ্চিম) কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। তার স্থলে চান্দগাঁও থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে মো. ছবেদ আলীকে পদায়ন করা হয়। তিনি উপ-পুলিশ কমিশনারের (পশ্চিম) কার্যালয়ে পরিদর্শক (অপরাধ) পদে কর্মরত ছিলেন। জনস্বার্থে তাদের বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে।’

একই ঘটনায় গত ৫ অক্টোবর দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তারা হলেন চান্দগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ আলী ও এ টি এম সোহেল রানা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মারধরের অভিযোগে শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামের এক নারী। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত জানুয়ারি থেকে তিন হাজার টাকা বেতনে রনি আক্তার তানিয়া শহীদুল্লাহর বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। প্রথম দুই মাস বেতন ঠিকমতো দিলেও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত বেতন বকেয়া ছিল। ১২ আগস্ট বকেয়া টাকা চাইলে ওই সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন শহীদুল্লাহ। ২৩ আগস্ট রাতে বকেয়া বেতন চাইতে গেলে শহীদুল্লাহ তানিয়াকে চড়থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে তার শ্যালক কায়সার আনোয়ার তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এ মামলায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানাটি ১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় আসে। পরদিন পরোয়ানা তামিল করতে থানার এএসআই ইউসুফ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৩ অক্টোবর রাতে শহীদুল্লাহকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।

শহীদুল্লাহর স্ত্রীর করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে দুদকের উপপরিচালক পদ থেকে অবসর নেন সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জের ধরে গত ২৯ আগস্ট শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামের এক নারী। আদালত মামলার শুনানি শেষে ওই দিন তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আসামিরা আদালতে হাজির হওয়ার সমন পাননি। মামলার পরবর্তী তারিখে আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ৩ অক্টোবর রাতে শহীদুল্লাহকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। থানায় নেওয়ার পর আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে শহীদুল্লাহকে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়।

শহীদুল্লাহর স্বজনদের দাবি, রনি আক্তার তানিয়া নামের কেউ তাদের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন না। হয়রানি করতেই প্রতিপক্ষের লোকজন বাদীকে দিয়ে মিথ্যা মামলাটি করেছিলেন।

চান্দগাঁও থানার ওসি মো. খাইরুল ইসলামের দাবি, শহীদুল্লাহকে ওই দিন রাতে গ্রেফতারের পর শরীর খারাপ লাগছে বলে আমাদের জানান। তখন আমার কক্ষে এনে বসিয়েছি। পরে তার ভাইদের জানিয়ে পার্কভিউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেফতারের পর থানায় এনে তাকে কোনও ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।

এদিকে, শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (ষষ্ঠ) আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন বাদী রনি আক্তার তানিয়া। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে আগামী ৩০ অক্টোবর শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বাদী রনি আক্তার তানিয়া মামলাটি চালাতে ইচ্ছুক না বলে প্রত্যাহারের আবেদনে উল্লেখ করেছেন।’

আরও পড়ুন: পুলিশের হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু, ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আরও পড়ুন: দুদক কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়ার পর মামলাটিকে মিথ্যা বলছেন বাদী

Source link

Related posts

জনসমাগম রোধে দুই ফেরিঘাটে বিজিবি’র পাহারা

News Desk

টিকটকের ভিডিও তৈরিতে বাধা দেওয়ায় নারীকে পিটিয়ে জখম 

News Desk

আগে টিকা পাবেন বয়স্ক, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা

News Desk

Leave a Comment