প্রতিবন্ধী ভাতা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দুই সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
বাংলাদেশ

প্রতিবন্ধী ভাতা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দুই সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

মাদারীপুরে প্রতিবন্ধী ভাতা দুই সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেদের বিকাশ নম্বর দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাতাভোগীরা জানেন না যে সরকার থেকে প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নে ঘটেছে এমন ঘটনা।

ভুক্তভোগী একাধিক ভাতাভোগী সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার এবং কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুপাই হাওলাদারের নামে মাদারীপুর সদর উপজেলা হতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। তবে রুপাই হাওলাদার নিজেই বিষয়টি জানেন না। সম্প্রতি তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে ৫ কিস্তির ১২ হাজার ৭৫০ টাকা এবং বিগত দুই কিস্তির আরও ৫ হাজার ১০০ টাকা তার বিকাশ নম্বরে যাচ্ছে না। যে দুই বিকাশ নম্বরে রুপাই হাওলাদারের টাকা যাচ্ছে তা হলো সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের। বর্তমানেও তার নামের টাকা ওই নম্বরেই যাচ্ছে। অথচ নম্বরটি প্রকৃত ভাতাভোগীর নয়।

এ ছাড়াও একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মামুন খান ও ছালমা বেগম দম্পতির বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ে ফাতেমা আক্তারের নামে ২০২০-২০২১ অর্থবছর হতে নিয়মিতভাবে তাদের নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা গেলেও হঠাৎ গত ৩ কিস্তির টাকা ওই নম্বরে আসেনি। পরে ভুক্তভোগীর মা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন মেয়ের নামের টাকা বর্তমানে অন্য আরেকটি নম্বরে যাচ্ছে। বিকাশ নম্বর পরিবর্তনের জন্য ভাতাভোগী ও পরিবার কোনও আবেদন সমাজসেবা অফিসে করেননি বলেও জানান। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই নম্বরটি সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের এক ঘনিষ্ঠজনের।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর সরদার অভিযোগ করেন, অনেক আগে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য মেম্বারের কাছে আইডি কার্ড দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি জানতে পেরেছেন তার নামে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামের প্রথম ৫ কিস্তির ১২ হাজার ৭৫০ টাকা একটি মোবাইল নম্বরে দেওয়া হয়েছে এবং বিগত ২ কিস্তির ৫ হাজার ১০০ টাকা আরেকটি বিকাশ নম্বরে ঢুকেছে। অথচ ওই নম্বর দুটি ভাতাভোগী মিজানুরের না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নম্বরটি কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমানের। এ ছাড়াও কালকিনি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের বয়স্ক ভাতার টাকাও এই নম্বরে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুজন ১৯৯৮ সালে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তারা ঘুরেফিরে মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলাতেই কর্মরত আছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তারা একই সঙ্গে পদোন্নতি পেয়ে ফিল্ড সুপারভাইজার থেকে সহকারী সমাজসেবা অফিসার হিসেবে বিধিবহির্ভূতভাবে পূর্ববর্তী কার্যালয়েই পদায়ন পেয়েছেন।

ভুক্তভোগী রুপাই হাওলাদারের ছেলে রাকিব বলেন, ‘আমাদের বিকাশ নম্বরের জায়গায় অন্য লোকের নম্বর দিয়ে তারা টাকা তুলে নেয়। আমরা কোনও টাকা পাইনি। পরে আমরা ডিসি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’

আমেনা বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার বিকাশ নম্বরের জায়গায় অন্য একজনের বিকাশ নম্বর। অথচ আমি আমার নম্বর পরিবর্তন করিনি। গত ৮-১০ মাস ধরে কোনও টাকা পাই না আমি। অফিসের লোকেরা এভাবেই আমার টাকা নিয়ে যাচ্ছে।’

ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার মোট সাত কিস্তির টাকা আমার মোবাইলে আসেনি। আমার মোবাইলের পরিবর্তে অফিসের স্যারের নম্বর দেওয়া। ওই বিকাশ নম্বরেই টাকা গেছে। আমাকে কোন টাকা দেয় নাই।’

এ ছাড়াও সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন সমাজসেবা অধিদফতরের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ‘ভদ্রখোলা আদর্শ সংস্থা’ নামে একটি ভুয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর সমাজকল্যাণ পরিষদসহ সরকারি দফতর থেকে আর্থিক অনুদান নিচ্ছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাদারীপুর সদরের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাকে বিপদে ফেলতে চলতি মাসেই আমার মোবাইল নম্বর এডিট করে তালিকায় দিয়েছে কেউ। আমার কাছে বিকাশ স্টেটমেন্ট রয়েছে। আমি থানায় জিডিও করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কাজটি করেছে। ভাতাভোগীদের নামের পাশে চলতি মাসেই আমার নম্বর যুক্ত করে দিয়েছে। আমি বিকাশের পুরো স্টেটমেন্ট তুলেছি। কোনও টাকা আমার বিকাশে আসেনি। আমি থানায় জিডিও করেছি। শিগগির সংবাদ সম্মেলন করবো।’

অভিযুক্ত অপর সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছেন।

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) নুসরাত আজমেরি হক বলেন, ‘ভাতাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Source link

Related posts

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা

News Desk

বরগুনার লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: ভয়াল সেই রাতের দুই বছর পূর্তি

News Desk

গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা ইমনকে দাফন, পরিবারের দায়িত্ব নিলেন তা‌রেক রহমান

News Desk

Leave a Comment