খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে না থাকা রোল নম্বর ৭৭১ চূড়ান্ত ফলাফলে (লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়) রয়েছে মর্মে অভিযোগ ওঠার পর একই তারিখ ও স্মারক দিয়ে ফলাফল সংশোধন করেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
তবে এই সংশোধিত ফলাফলে ৪ চাকরিপ্রার্থীর ইনস-আউট হয়েছে। অর্থাৎ ৪ জনকে বাদ দিয়ে আরও ৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফলে ৩৩৭ রোলধারীর মধ্য থেকে সংশোধিত ফলাফলে কপাল পুড়েছে ৭৭১, ১৬৫৪, ৩২১৬ এবং ৩৮৩৮ রোল নম্বরধারীদের। এই চার রোল বাদ দিয়ে ফলাফল সংশোধন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
চার জনের কপাল পুড়লেও কপাল খুলেছে গতকাল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ফলাফলে না থাকা আরও ৪ প্রার্থীর। কপাল খুলে যাওয়া ৪ প্রার্থীর রোল নম্বর হচ্ছে ৮৮৪, ২০৮২, ৩২৪৬ এবং ৩৮৩৭। সংশোধিত ফলাফলে একজন কমে সংখ্যাটা হয়েছে ৩৩৬।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একাধিক চাকরিপ্রার্থী। তাদের মতে, একজনকে বাদ দিতে গিয়ে চার জনকে বাদ দিয়ে এবং নতুন আরও চার জনকে ফলাফল শিটে অন্তভুর্ক্ত করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
গতকাল প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে (৭৭১, ১৬৫৪, ৩২১৬ এবং ৩৮৩৮ রোল নম্বরধারীদের) বর্তমান অবস্থা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন এসব প্রার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রচারের পর ব্যাপক সাড়া পড়ে স্থানীয়দের মাঝে। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইট থেকে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করেন। আজ স্বাক্ষর করলেও তা আগের তারিখ ও স্মারকেই করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাহাবুদ্দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘কাজ করলে ভুল হতেই পারে। ফলাফল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে সমস্ত ত্রুটি দূর করে প্রকাশ করা হয়েছে।’ এর বেশিকিছু বলতে চাননি তিনি।
জেলা পরিষদ কর্তৃক গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষায় ১২৪৯ জন পরীক্ষার্থীকে পাস দেখানো হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ক্রমানুসারে প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত ফলাফল শিটে ৭৭১ নম্বর ক্রমিক নাম্বার ছিল না। কিন্তু ৬ অক্টোবর প্রকাশিত চূড়ান্ত চাকরিপ্রার্থীদের ফলাফল বিবরণীতে দেখা যায় ৭৭১ নম্বর ক্রমিক রয়েছে। অর্থাৎ ৭৭১ নম্বর ক্রমিকধারী প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩৩৭ জনের তালিকায় না থাকা প্রার্থীর রোল নম্বর (৭৭১) কীভাবে চূড়ান্ত ফলাফলে (লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পরে) আসলো এবং তা কার রোল নম্বর তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
জেলা পরিষদের সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল বলেন, ‘নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। প্রথমত, ২৫৭ জনকে নিয়োগ করার কথা থাকলেও নিয়োগ করা হয়েছে ৩৩৭ জনকে। লিখিত পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ উত্তরপত্রে। যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পায়নি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসকের কোনও প্রতিনিধি ছিল না। ক্রমিক অনুসারে কখনও ফলাফল ঘোষণা হয় না। ফলাফল ঘোষণা করা হয় মেধাক্রম অনুসারে এবং নাম প্রকাশের মাধ্যমে। তা-ও করা হয়নি। ঘুষ ও দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার উদাহরণ ৭৭১ নম্বর ক্রমিক। যার নম্বর লিখিত পরীক্ষায় না থাকলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম বলেন, ‘গত দুদিনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখলে বুঝতে পারবেন কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার যেসব নিয়মকানুন রয়েছে তার কোনোটিই মানা হয়নি।’ তিনি পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া তদন্ত করে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
নিয়োগ প্রদানকারী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘কোনও অনিয়ম হয়নি। দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই। ৭৭১ নম্বর রোল টাইপিং মিসটেক হতে পারে। অফিস খোলার দিন যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।