Image default
বাংলাদেশ

বগুড়ায় যমুনাপাড়ে লাল মরিচ নিয়ে নারীদের কর্মযজ্ঞ

বগুড়ায় মরিচ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে চরের নারী শ্রমিকদের। যমুনার চরে বসবাসকারী সংগ্রামী নারীরা বরাবরই কর্মপ্রেমী হয়ে থাকেন। চরাঞ্চলের এ মানুষগুলো অভাবে লালিত হওয়ায় জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে তারা হয়ে ওঠেন ভীষণ কর্মঠ। বৃহস্পতিবার বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যমুনার বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে চরাঞ্চলের পরিশ্রমী নারীদের কর্ম ব্যস্ততা।

শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কম হওয়ায় যমুনার বিশাল বুকজুড়ে শোভা পাচ্ছে মাইলের পর মাইল চর। চরের এসব জমিতে নদীর ভাঙনের শিকার মানুষগুলো সামর্থ অনুযায়ী মরিচ চাষ করেছিলেন। চরাঞ্চলে উৎপাদিত সেই খ্যাতির মরিচ নিয়েই বর্তমানে যমুনা বেষ্টিত এলাকাগুলোতে চলছে নারীদের কর্মযজ্ঞতা। এভাবেই চরের নারী-পুরুষ মিলে অভাব গোছানোর সংগ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী শ্রমিক হিসেবে নিয়মিত কাজ করে থাকেন অনেকেই। তবে মজুরি পেয়ে থাকেন পুরুষের তুলনায় অর্ধেক।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা বেষ্টিত এলাকাগুলোতে গেলে লাল বাগিচার মতো শুকনো মরিচ নিয়ে চরের নারীদের কর্মযজ্ঞতার এমন চিত্র দেখা যাবে। প্রতিবছর এ সময় যমুনার বাঁধসহ বিভিন্ন চাতালে নেড়ে দেওয়া মরিচ শুকানো ও বাছাইয়ের কাজ করেন চরাঞ্চলের সংগ্রামী নারীরা। ভালো ও খারাপ মরিচগুলো আলাদা করার কাজে ব্যস্ত দেখা যায় তাদের। কেননা বাজারে ভালো মরিচের দাম বেশি হয়ে থাকে। আর খারাপগুলোর দাম কিছুটা কম হয়।

শুকনো মরিচ সংক্রান্ত এ কাজটি সাধারণত নারীদের দিয়ে করানো হয়। যদি পুরুষরা এ কাজ করেও তাহলে নারীদের মতো অতটা নিখুঁত হয় না। এ কারণে বাগান বা ক্ষেত থেকে মরিচ ওঠানোর কাজটা বরাবরই নারীরা করে থাকেন। একইভাবে মরিচ শুকানো ও বাছাইয়ের কাজটিও নারীরাই করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তাছলিমা বেগম, সালমা খাতুন, শাহিনুর, খোকন, জালালসহ বেশ কিছু নারী-পুরুষ একসঙ্গে সঙ্গবদ্ধভাবে শুকাতে দেওয়া মরিচ থেকে ভালো ও খারাপ মরিচ আলাদ করার কাজ করছিলেন।

তারা বলেন, যমুনাকেই বুকে আঁকড়ে রেখেছেন তারা। প্রতিবছর বর্ষায় যমুনা হিংস্র রূপ নেয় ও বসতভিটা কেড়ে নেয়। তবুও যমুনাকে ঘিরেই তাদের বসবাস। কেননা যাওয়ার তো কোনো জায়গা নেই তাদের। অব্যাহত যমুনার ভাঙনে আজ কত যে পরিবার নিঃস্ব। অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছেন চরাঞ্চলের মানুষগুলো। তবে প্রত্যেক বছরের এ সময়টাতে আগ্রাসী যমুনা তার বিশাল বুক উজার করে এসব অভাবী মানুষদের ফসল উপহার দেয়।

তারা আরও বলেন, আমরা প্রতিবছর অপেক্ষায় বসে থাকি কখন যমুনার পানি নেমে যাবে। স্বামীর সঙ্গে চরের জমিতে মরিচ লাগানোর কাজে যাব। সংসারের প্রয়োজনে শ্রম বিক্রি করে অর্থ আয় করতে হয় তাদের। দিন শেষে শ্রমের মজুরি পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। চরে উৎপাদিত মরিচসহ রকমারি ফসল তাদের হারানো শক্তি অনেকটাই ফিরিয়ে দেয় বলেও মন্তব্য করেন।

চরের এসব নারীরা জানান, চরের জমিতে ফসল ফলানোর আসল কাজটি পুরুষরাই করে থাকেন। এরমধ্যে সেচ ও জমি প্রস্তুতির বিষয়টি অন্যতম। এছাড়া কীটনাশক ও স্প্রে করার কাজও রয়েছে। সেই কাজগুলো তাদের স্বামীরা বা পুরুষরাই করে থাকেন।

বগুড়ার চরের মরিচের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তাই চরের বেশির ভাগ মানুষই মরিচ চাষ করে সংসারের বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন। বছরের এ সময়টায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও চরাঞ্চলে চাষ হওয়া মরিচ শুকানো ও বাছাইয়ের সিংহভাগ কাজ নারীদের হাতেই হয়।

Related posts

১৮ বছরেও কাটেনি সুপেয় পানির সংকট

News Desk

শিবচরের ঘটনায় মামলা, আসামি স্পিডবোট মালিক-চালকসহ ৪

News Desk

মোংলা থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’

News Desk

Leave a Comment