সোনারগাঁও বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহর এবং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। একসময় বাংলার রাজধানী হিসেবে খ্যাত এই স্থানটি আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে তার ঐতিহাসিক স্থাপনা, মসলিন শিল্পের গৌরব এবং লোকশিল্পের ঐতিহ্যের জন্য।
সোনারগাঁওয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
সোনারগাঁও শব্দের অর্থ “সোনার শহর,” যা এর প্রাচীন গৌরবময় অবস্থার প্রতীক। এটি ১৩শ শতাব্দী থেকে শুরু করে মুঘল আমল পর্যন্ত বাংলার রাজধানী ছিল। সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের শাসনকাল এবং পরে ঈসা খাঁর সময়ে সোনারগাঁও বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পাওয়া মসলিন কাপড়ের উৎপত্তি এখানেই। সোনারগাঁও ছিল তৎকালীন বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং বহু বিদেশি বণিকের মিলনস্থল।
দর্শনীয় স্থান
সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণ রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান:
১. ফোক আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস ফাউন্ডেশন (লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর)
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প ও লোকশিল্পের নিদর্শন সংরক্ষিত।
এখানে মসলিন তৈরির ঐতিহ্য, পুতুল নাচ, এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেখা যায়।
২. পানাম নগর
১৫শ শতকের এই শহরটি প্রাচীন বাংলার অভিজাত শ্রেণির বসবাসের স্থান ছিল। পানামের রাস্তায় সারিবদ্ধ প্রাচীন ভবনগুলির স্থাপত্যশৈলী আপনাকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
পানাম নগরের ভবনগুলো ইট ও চুনাপাথর দিয়ে তৈরি, যা মুঘল ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের মিশ্রণ।
৩. বড় সর্দারবাড়ি
এটি একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ, যা বর্তমানে লোকশিল্প জাদুঘরের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এর ভেতরে রয়েছে মার্জিত স্থাপত্য, খোদাই করা দরজা ও জানালা।
৪. গোপালদী শিব মন্দির
প্রাচীন এই মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর অনন্য স্থাপত্য দর্শকদের মুগ্ধ করে।
৫. সোনাকান্দা দুর্গ
মুঘল আমলে নির্মিত এই দুর্গটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনা ছিল।
তথ্য
অবস্থান: নারায়ণগঞ্জ জেলা, ঢাকা থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে।
যাতায়াত: ঢাকা থেকে বাস, সিএনজি বা প্রাইভেট গাড়িতে সহজে যাওয়া যায়।
সময়: সোনারগাঁও ভ্রমণের জন্য শীতকাল উপযুক্ত।
প্রবেশ ফি:
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে প্রবেশের জন্য আলাদা টিকিট।
পানাম নগর এবং অন্যান্য স্থানেও নামমাত্র প্রবেশ ফি প্রযোজ্য।
ভ্রমণের সময় আরামদায়ক পোশাক এবং হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন।
পানাম নগর এবং জাদুঘর দর্শনের সময় স্থানীয় গাইড নিতে পারেন, যা ইতিহাস বুঝতে সহায়ক।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য স্থানীয় নিয়মাবলী মেনে চলুন।
সোনারগাঁও ভ্রমণ একদিকে ইতিহাসের ছোঁয়া দেয়, অন্যদিকে বাংলার ঐতিহ্যের গভীরতায় প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।