বিশ্ববাজারে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আলু, বেড়েছে আবাদ
বাংলাদেশ

বিশ্ববাজারে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আলু, বেড়েছে আবাদ

দেশের কৃষিনির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও বরাবরই ধান, গম, পাট, আখ, আম উৎপাদনে সমৃদ্ধ। এবার এই জেলার কৃষকদের আলু দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্ববাজারে। কৃষকদের পরিশ্রম আর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মানসম্মত আলু উৎপাদিত হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের নজর কেড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই কৃষিপণ্য।

ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে এখানকার আলু রফতানি শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে তাকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার। জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন উচ্চমানের আলু উৎপাদনে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে উঠছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। অধিক লাভ হওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টরে। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১৫৫৫ হেক্টরে।

সদর উপজেলায় গত বছর আলুর আবাদ ছিল ১৪ হাজার ২৭০ হেক্টর। এ বছর আলুর আবাদ ১৭ হাজার ১৭৫ হেক্টর।

সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শুধু এই উপজেলা থেকেই নেপালে গেছে গ্র্যানোলা জাতের আলু। যার এ যাবৎ রফতানির পরিমাণ ১১৫ মেট্রিক টন। মালয়েশিয়াতে সানশাইন জাতের আলু রফতানি হয়েছে ৪৫ মেট্রিক টন।

মালয়েশিয়াতে রফতানি করছে নাঈম অ্যাগ্রো নামের কোম্পানি। এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আল ইমরান জানান, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার আলুচাষিদের সানশাইন জাতীয় আলু চাষের উদ্যোগ সফল হয়েছে। এর গুণগতমান আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত হচ্ছে।

গুণগতমান বাড়ানোর উদ্যোগ স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের

বর্তমানে স্থানীয় বাজারে আলুর দাম প্রতিকেজি ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে থাকলেও বিদেশে রফতানির ফলে প্রতিকেজিতে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা হলেও লাভবান হচ্ছেন। তবে প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে গড়ে ২০ টাকা খরচ হচ্ছে, যা এখনও কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমরা এতদিন শুধু দেশীয় বাজারে আলু বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে শুনে আমরা খুবই খুশি। এতে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে, আর আমাদের উৎপাদনও বাড়বে।’

পীরগঞ্জের কৃষক আবু সালেক বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত আলু যদি ভালো দামে বিদেশে যায় তাহলে আমরা আরও বেশি আলু চাষে আগ্রহী হবো। তবে উৎপাদন খরচ যদি কমানো যায় তাহলে লাভ আরও বেশি হবে।’

উৎপাদন খরচ কমিয়ে ভালো লাভের আশা কৃষকদের

দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও থেকে আলু রফতানির কাজে যুক্ত নাঈম অ্যাগ্রোর সিইও আল ইমরান বলেন, ‘আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত আলুর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য বড় সুখবর। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছি যাতে তারা ভালো দাম পায় এবং রফতানির জন্য মানসম্মত আলু সরবরাহ নিশ্চিত হয়।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরুল আলম বলেন, ‘জেলার কৃষকরা এখন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু উৎপাদন করছেন। এতে মান বজায় থাকছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা যাতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ পান, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমাদের কৃষিক্ষেত্রে বিরাট সসম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ নিবিড়ভাবে এই বিশেষ জাতের আলুগুলোর উৎপাদনসহ আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করে প্যাকেটিং করার সব কাজে কৃষকের পাশে আছে। এই আলু চাষের সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য কৃষকদের উৎসাহ ও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি আমরা, যা আরও বাড়ছে। কৃষকরাও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। যদিও এবারের আলুর বাজারে দাম কম নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে আমাদের জানাচ্ছেন। তবে সার্বিকভাবে এটা ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য অত্যন্ত বড় সুখবর।’

Source link

Related posts

যাদের ঝগড়া থামাতে গেলেন তারাই কুপিয়ে মারলেন

News Desk

টাকা না পেয়ে মাকে কুপিয়ে হত্যা করলো ছেলে

News Desk

ই-কমার্সে প্রতারণা বাড়ছে, অনেকে পেমেন্ট করেও পণ্য পায়নি: রাষ্ট্রপতি

News Desk

Leave a Comment