নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে বেনাপোল স্থলবন্দরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ আরও সহজ হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে আমদানিকারকদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে। তারা বলছেন, সিসি ক্যামেরার আওতায় আসায় বন্দর থেকে পণ্য চুরি কমবে। নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে বেনাপোল কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরার আওতায় এলেও, এতদিন বন্দরে তা ছিল না। যে কারণে পণ্য চোরাচালান, মাদক পাচার, দুর্বৃত্তায়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এবার সিসি ক্যামেরা স্থাপনে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি শুরু হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের স্থলপথের ৮০ শতাংশ বাণিজ্য হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও আট হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, প্রায় প্রায় বন্দরে পণ্য চুরি, পণ্য চোরাচালান, বারবার অগ্নিকাণ্ড, মাদক পাচার, অপরাধ কর্মকাণ্ডসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছিল। এতে স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হয়। এছাড়া ঝুঁকির মধ্যে ছিল বন্দরের নিরাপত্তা। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিল। এবার সে অপেক্ষার অবসান হলো।
যশোরের মোটরপার্টস আমদানিকারক রেজোয়ান আহমদ বলেন, বন্দরে কোটি কোটি টাকার পণ্য রেখে চুরি ও নাশকতার শঙ্কায় থাকতে হতো। ব্যবসায়ীরা পণ্য চুরি বা আগুনে পুড়লে কোনও ক্ষতিপূরণ পান না। সিসি ক্যামেরার আওতায় বন্দরটি আসায় এখন আমাদের চিন্তা কমবে।
বেনাপোলের শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার মো. বাবু বলেন, বেনাপোল বাস টার্মিনালে নামার সঙ্গে সঙ্গে দালালের খপ্পরে পড়তে হয় যাত্রীদের। এখন এ সমস্যা কমে আসবে। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়বে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কারণে বৈধপথে আমদানি পণ্যের সঙ্গে চোরাচালান ও মাদকপাচার কমে আসবে। এতে বাণিজ্যিক নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বেনাপোল বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। কেননা, এর আগে একাধিকবার বন্দর থেকে পণ্য চুরি হয়েছে, আগুন লেগে মালামাল পুড়ে গেছে। এসব ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। এখন বন্দরটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আসায় ব্যবসায়ীরা হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবেন।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে শেষ করতে দেরি হয়। এখন বন্দরের আমদানি পণ্যের প্রবেশদ্বার, ট্রাক টার্মিনাল, বাইপাস সড়ক, ঢাকা-কলকাতা মহাসড়ক, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ৩৭৫টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। সিসি ক্যামেরায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও যাত্রী যাতায়াতের তদারকি করা হবে। এতে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে বলে জানান তিনি।