ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়ার পাহাড়ি টিলার লাল মাটিতে এ বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাশাপাশি কৃষকরা সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্চা করায় এমন ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়ে খুশি বাগান মালিকরা। অন্যদিকে দাম হাতের নাগালে থাকায় স্বস্তিতে ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী লাল পাহাড়ি মাটিতে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। মধুমাসে বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, মেরাসানী, আউলিয়া বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল এবং কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর, বায়েক, মন্দবাগ, কায়েমপুর এবং আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমুদাবাদ, রাজাপুর ও আমুদাবাদ এলাকায় কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি রোগবালাই মুক্ত হওয়ায় পরিপক্ব অবস্থায় বাগান থেকে কাঁঠালগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় বাজারে পাহাড়ি কাঁঠালের বেশ চাহিদা রয়েছে। ১০০ কাঁঠাল আট থেকে ১০ হাজার টাকায় বাগান থেকে বিক্রি হচ্ছে। এতে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুরের বাগান মালিক আবুল হাসান বলেন, ‘এবার আমাদের এলাকায় কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ কাঁঠাল কাটা হয়। ১০০ কাঁঠাল আট থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন কাঁঠাল নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসেন। তারা এসব কাঁঠাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। এ বছর কাঁঠালের ফলন ভালো হওয়ার আমরা লাভবান হবো বলে আশা করছি।’
বিজয়নগরের বাগান মালিক আলামিন বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। আকারে দেখতেও বেশ বড়। মাস দেড়েক আগে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী তিন মাস পর্যন্ত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাগান মালিকরা কাঁঠাল বিক্রি করে লাভবান হবেন। বিজয়নগর এলাকার মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে।’
পাহাড়পুরের মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা আগেই কাঁঠাল বাগান কিনে রেখেছিলাম। ১০০ কাঁঠাল পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা কিনেছিলাম। এখন কাঁঠাল পরিপক্ব হওয়ায় পাইকাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাগানে আসছেন। ১০০ কাঁঠাল আট থেকে নয় হাজার টাকা বিক্রি করছি। এই দাম থাকলে আগামী তিন মাস ব্যবসা ভালো হবে।’
স্থানীয় কাঁঠাল ক্রেতারা জানান, সীমান্তবর্তী পাহাড়ি লাল মাটিতে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও হাতের নাগালে রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দ বাজারের কাঁঠাল বিক্রেতা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বিজয়নগরের বিষ্ণপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, মেরাসানী ও আউলিয়া বাজার এলাকা থেকে কাঁঠাল নিয়ে আসি। বাজারে প্রতিদিন ৩০০ কাঁঠাল বিক্রি করি। বিজয়নগরের কাঁঠাল বেশি পছন্দ করেন ক্রেতারা। এখানে কাঁঠালের সাইজ দেখে দাম নির্ধারণ করা হয়।’
বাজারে কাঁঠাল কিনতে আসা নুরুল হক বলেন, অন্যান্য এলাকা থেকে বিজয়নগরের কাঁঠাল সবার পছন্দের। এসব এলাকার কাঁঠাল মানুষ কিনে বেশি। আমিও এসেছি কেনার জন্য। দাম হাতের নাগালেই আছে।
কাঁঠাল কিনতে আসা লোকমান মিয়া বলেন, মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় এই অঞ্চলের কাঁঠাল খুব মিষ্টি হয়। সেজন্য আমরা এলাকার কাঁঠাল বেশি পছন্দ করি। বাজারে কাঁঠালের দামও ভালো। সেজন্য কিনতে এলাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত সাহা বলেন, ‘মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় চলতি বছর জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলার পাহাড়ি টিলার লাল মাটিতে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। সেজন্য এই অঞ্চলে কাঁঠালের আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছর কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর জেলা থেকে ২২ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে আশা করছি আমরা।’