যেভাবে কোরবানির প্রচলন হয় সিলেটে
বাংলাদেশ

যেভাবে কোরবানির প্রচলন হয় সিলেটে

হজরত শাহজালাল (রহ) ও হজরত শাহপরাণ (রহ)-সহ ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট। সুদূর ইয়েমেন থেকে এসে সিলেটে ইসলাম প্রচার শুরু করেন তারা। এসব মর্যাদার কারণে সিলেটকে বলা হয় আধ্যাত্মিক নগরী। সিলেটে কীভাবে কোরবানির প্রচলন হয় তার পেছনে আছে এক হৃদয়বিদারক কাহিনি।

ইসলামি শরিয়ত অনুসারে যেভাবে হজরত শাহজালাল (রহ) ও হজরত শাহপরাণ (রহ) পশু কোরবানি করে মানুষদের মধ্যে বণ্টন করতেন সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রয়েছে। তবে সিলেটের প্রথম মুসলমান গাজী সৈয়দ বুরহান উদ্দিন (রহ) অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দের কারণে কোনও কোরবানি করতে পারেননি। বরং তার ছেলে সৈয়দ গুলজার আলম (রহ) জন্ম নেওয়ার পর শরিয়ত মোতাবেক আকিকা করায় ছেলের ডান হাত কেটে হত্যা করা হয়।

হজরত শাহজালাল (রহ) মাজারের মোতাওয়াল্লি ফতেহ উল্লাহ আল আমান জানান, সিলেট থেকে ইসলাম প্রচার শুরু হওয়ার পর নিয়মিত কোরবানি দিতেন হজরত শাহজালাল (রহ)। তার কোরবানি ছিল শরিয়তের বিধি মোতাবেক। কোরবানির গোশতও বণ্টন করতেন সকল স্তরের মানুষের মধ্যে। তার বণ্টনের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ ছিল না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৎকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত মানুষ হজরত শাহজালাল (রহ)-এর মাজারে আসেন মানতের গরু-ছাগল নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘মানত হিসেবে আসা গরু-ছাগল জবাই করে হজরত শাহজালাল (রহ) মাজারে আগতদের জন্য খাবার পরিবেশন করার পাশাপাশি ঈদে গোশত বণ্টন করা হয়। আমরা নিজেরাও পারিবারিকভাবে শরিয়ত অনুসারে কোরবানি আদায় করে হজরত শাহজালাল (রহ)-এর দেখানো পথ আর ইসলামের বিধি অনুসারে বণ্টন করে থাকি।’

এদিকে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস শাহ গাজী সৈয়দ বুরহান উদ্দিন (রহ) মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা শাহ নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, তৎকালীন সময়ে সিলেটে অত্যাচারী শাসক রাজা গৌড় গোবিন্দের কারণে মুসলমানেরা ছিলেন অনেকটা অসহায়। কেউ কোরবানি করা তো দূরের কথা ইসলাম প্রচার করতেও সাহস করতো না। অনেক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ)-এর এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। জন্ম নেওয়া নবজাতকের নাম রাখা হয় সৈয়দ গুলজার আলম (রহ)। ছেলের জন্মের খুশিতে প্রথম কোনও মুসলমান গরু জবাই করে আকিকা করেন। সেই আকিকা কাল হয়ে দাঁড়ায় বুরহান উদ্দিন (রহ)-এর পরিবারে।

তিনি বলেন, ‘গৌড় গোবিন্দ তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে বুরহান উদ্দিন (রহ) ও তার নবজাতক ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর নবজাতক ছেলের ডান হাত কেটে হত্যা করা হয়। ছেলের মরদেহ দেখে বুরহান উদ্দিন (রহ)-এর স্ত্রীও মারা যান। নিজ বাড়ির একটি অংশে তাদের পাশাপাশি দাফন করা হয়। এরপর অত্যাচারী রাজার রাজ্য থেকে ইসলাম প্রচার শুরু করেন হজরত শাহজালাল (রহ) ও হজরত শাহপরাণ (রহ)-সহ ৩৬০ আউলিয়া। এরপর থেকে ইসলামি নিয়ম অনুসারে এই অঞ্চলের মানুষ কোরবানি দিয়ে থাকেন।’

বিশিষ্ট গবেষক অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন বলেন, ‘হজরত শাহজালাল (রহ)-এর কারণে আমাদের সিলেট আজ বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী। সিলেটকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ পবিত্র নগরী হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে। সর্বজনস্বীকৃত হজরত শাহজালাল (রহ) একজন আল্লাহর অলি ছিলেন। তার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষ অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়েছে। ইসলামের রীতিনীতি অনুসারে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ) ও হজরত শাহপরাণ (রহ)-সহ ৩৬০ আউলিয়া ইসলাম প্রচার করেছেন, সেই ধারাবাহিকতা এই অঞ্চলে এখনও বিদ্যমান।’

সিলেটের ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মনির উদ্দিন বলেন, ‘সিলেটের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এই অঞ্চলের মানুষ খুবই ধার্মিক। তাই তো সুদূর ইয়েমেন থেকে মাটির সঙ্গে মিল পাওয়ার পরপরই সিলেট থেকে শুরু হয় ইসলাম প্রচারের কাজ। এমনকি এই অঞ্চলকে গৌড় গোবিন্দ নামক এক অত্যাচারী রাজার হাত থেকে মুক্ত করে ওড়ানো হয় ইসলামের বিজয়নিশান। কোরবানি দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, মানুষকে দেখানো কোনোভাবেই সমুচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানি শব্দটি কুরবুন মূলধাতু থেকে এসেছে। অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা, সান্নিধ্য অর্জন করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবাই করাই হলো কোরবানি। কোরবানি হলো ইসলামের মহান নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে সুরা কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও পশু কোরবানি করো।’

Source link

Related posts

শৈলকুপায় উপ-নির্বাচন: কেন্দ্রে ভোটারের দেখা নেই

News Desk

৭ মাস পর চালু হয়েছে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

News Desk

ইবাদতের মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment