খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা উপকরণ, যোগাযোগ, আর্থিক সংকট, সময়োপযোগী উদ্যোগসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা। এসব সংকটকে পাশ কাটিয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্থানীয়ভাবে কোনও রকমে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হচ্ছেন। তবে উপজেলা বা জেলা শহরে গিয়ে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে পড়ার সুযোগ হচ্ছে না। এ অবস্থায় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় যথাযথ জরিপ করে দুগর্ম এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের তৈকাথাং মৌজায় ১০ গ্রামে চারশ’ পরিবারের বসবাস । এখানে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষা উপকরণের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। কোনও রকমে প্রাথমিকের গন্ডি পা হতে পারলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় পড়াশোনা করতে পারছে না তারা। একই অবস্থা দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি ও বর্মাছড়ি ইউনিয়নের সমুরপাড়া, হলুদিয়া পাড়া, বড়পাড়া, লেলাং ও দন্ডিপাড়া এলাকায়। এই পাঁচ গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই কোনও মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ধুরুং নদীর কারণে পাড়াগুলো লক্ষ্মীছড়ি ও পাশের মানিকছড়ি উপজেলা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। এই কারণেও শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত মাধ্যমিক শিক্ষাসহ সব ধরনের উচ্চ শিক্ষা হতে। মাটিরাঙা এবং লক্ষ্মীছড়ির মতো খাগড়াছড়ির প্রায় সব একটি দুর্গম এলাকার একই চিত্র।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দণ্ডীপাড়া এলাকার গ্রাম প্রধান চিংলামং মারমা বলেন, আমাদের পাঁচ গ্রামের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। ধুরং নদীর ওপর কোনও ব্রিজ না থাকায় প্রায় পুরো বছরই যোগাযোগের সংকট থাকে। তাছাড়া পুরো এলাকার লোকজনকে নির্ভর করতে হয় কৃষি ও বনজ সম্পদের ওপর। যোগাযোগ ও আর্থিক সংকটের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর পড়া লেখা হয় না বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর। তিনি মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ধুরং নদীর উপরে ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানান।
মাটিরাঙা উপজেলার তৈকাথাং এলাকার অভিভাবক বিধান ত্রিপুরা বলেন, দুর্গম এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতে পারে না। প্রাথমিকে কোনও রকমে পড়ালেখা করতে পারলেও মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শহরে গিয়ে সবার পড়াশোনার সুযোগও নেই।
খাগড়াছড়ি জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন প্রায় ২৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার খাগড়াছড়ি জেলার ৯ উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ১২৯টি । দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই বললেই চলে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যায়। সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে শিক্ষিত, ধনী ও সম্ভ্রান্ত লোকেরা উদ্যোগ নিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে পাঠদানের অনুমোদন, ভবন নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা ।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার শিশু। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষার আওতায় আসছে গড়ে ৪০-৪৫ হাজার শিশু। অর্থাৎ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব নিয়ে জরিপ করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট দূরত্বে বিদ্যালয়
স্থাপনের জন্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসারও অনুরোধ জানান তিনি।