রোটাভাইরাসে পনেরো দিনে এক হাসপাতালেই ভর্তি ৪৮৪১ রোগী, বেশিরভাগ শিশু
বাংলাদেশ

রোটাভাইরাসে পনেরো দিনে এক হাসপাতালেই ভর্তি ৪৮৪১ রোগী, বেশিরভাগ শিশু

রোটাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর ফলে ডায়রিয়া ও কলেরা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্চ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। গত পনেরো দিনে চাঁদপুরের মতলবে অবস্থিত হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী।

আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। শুধু চাঁদপুরই নয়, আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই শিশুসহ নানা বয়সী রোগীর ভিড় বাড়ছে এই হাসপাতালে। ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় বেড বসিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঠান্ডা, দূষিত পানি এবং দূষিত খাবার খাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা চিকিৎসকদের।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেলো, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দূরদূরান্ত থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। তারা জানান, তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত বাড়িতে পাতলা পায়খানা, বমি হচ্ছিল শিশুদের। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় অবস্থা খারাপ দেখে রোগীদের নিয়ে আসছেন আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে।

আইসিডিডিআরবি মতলব হাসপাতালের তথ্যমতে, ৭০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের শয্যার তুলনায় চার গুণেরও বেশি রোগী এসেছে। আর গত পনেরো দিনে চিকিৎসা নিয়েছে ৪ হাজার ৮৪১ জন রোগী। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ, নীলফামারী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা আসছে।

রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার

আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. চন্দ্র শেখর দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোটাভাইরাসে আক্রান্তদের পাতলা পায়খানা, বমি সঙ্গে জ্বরও থাকতে পারে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদি শিশু খুব দুর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়ে, ঘণ্টায় তিন বা তার বেশি বমি করে, শিশুর পেট ফুলে গেলে, শ্বাসকষ্ট হলে, পায়খানায় রক্ত গেলে, জ্বর বা খিঁচুনি হলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে অতি দ্রুত কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে শিশুকে পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন এবং অন্যান্য ওষুধ চালিয়ে যাবেন। প্রতিপ্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে নেবেন এবং শিশুর যত কেজি ওজন প্রতিবার পায়খানার পর তত চা-চামচ স্যালাইন খাওয়াবেন। অর্থাৎ শিশুর ওজন ১০ কেজি হলে ১০ চা-চামচ স্যালাইন খাওয়াবেন। পাঁচ বছরের শিশুকে একটি করে জিংক ট্যাবলেট দশ দিন খাওয়াবেন। দুই বছরের শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবেন। ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশু খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বাসায় রান্না করা সব ধরনের খাবার খাবে। রোগীকে বেশি বেশি ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াবেন। রোগীকে কোমলপানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়াবেন না। সাধারণত এই নিয়ম মেনে চললে আক্রান্ত শিশুরা এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে ওঠে।’

আক্রান্তের ৮৫ ভাগই শিশু, আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

আইসিডিডিআরবি’র প্রধান ডা. মো. আলফজল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীতকালে শিশুদের ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ে। যা সাধারণত রোটাভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে বলে আমরা মনে করি। গত পনেরো দিন যাবৎ গড়ে তিন শতাধিক রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। যার প্রায় ৮৫ ভাগই দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু।’

তিনি বলেন, ‘পাতলা পায়খানার সঙ্গে শিশুর বমি ও জ্বর থাকতে পারে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাকে প্রতিদিন একটি করে বেবি জিংক দশ দিন খাওয়াতে হবে। এই ডায়রিয়া ভালো হতে সাধারণত তিন থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতির অবনতি হলে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করবেন। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসামগ্রী, ওষুধ এবং বেডের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনও পরিস্থিতিকে আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবো বলে আশাবাদী।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি রোগী আসছেন। প্রতিবছরই আমরা দেখছি দূরদূরান্ত থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা মতলব হাসপাতালে আসছেন। যার ফলে আমাদের সেবা দেওয়ার এলাকা বাড়ছে। বর্তমানে আমরা প্রায় ৩৫টি উপজেলার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি।’

Source link

Related posts

ছাত্রলীগ কর্মী নয়ন হত্যা: আরও ৪ আসামি গ্রেফতার

News Desk

‘ধানও পাইলং না, পোয়ালও পাইলং না’

News Desk

হিলিতে ৭ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা

News Desk

Leave a Comment