১০২০ যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার-ঢাকা ট্রেন চলাচল শুরু
বাংলাদেশ

১০২০ যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার-ঢাকা ট্রেন চলাচল শুরু

অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো। ট্রেনের হুইসেল শুনলো কক্সবাজারবাসী৷ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি প্রথমবারের মতো ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী।

তিনি জানান, এক হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে।

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ছেড়েছে ট্রেনটি। চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে ছাড়বে বিকাল ৪টায়। রাত ৯টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে ঢাকায়। একইভাবে ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে রাত ৪টায় রওনা দিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। অর্থাৎ রাজধানী থেকে পর্যটন শহরে যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

তবে ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে ট্রেনটি। এই দুই দিন একমুখী গন্তব্যে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা বিলাসবহুল কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে ১৫টি বগি রয়েছে। এতে মোট আসন ছিল ৭৮০টি। এর মধ্যে ছয়টি এসি বগিতে আসন ৩৩০টি। সাতটি নন-এসি বগিতে ৪২০টি ও দুটি খাবারের বগিতে ১৫টি করে ৩০টি আসন ছিল। তবে প্রথম দিন যাত্রী ছিল এক হাজার ২০ জন।

রেলের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মোহাম্মদ ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে থেকেই ট্রেনটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে প্রস্তুত ছিল। শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে ট্রেন চালানোর জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

এর আগে, গত ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ট্রেন চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে রেললাইনে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। কাউন্টারে কোনও যাত্রীকে সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি থানা এবং ছয়টি পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো এখনও অনুমোদন হয়ে আসেনি। এরপরও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি আমরা।’

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

জানা যায়, ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সাতকানিয়ায় নির্মিত চারটি সেতু ট্রেন ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। কক্সবাজার স্টেশনে পদায়ন করা হয়েছে একজন ইনচার্জসহ মোট ৪ জন স্টেশন মাস্টারকে। এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে প্রয়োজনীয় লোকবল।

প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন এলাকা চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার আওতায় থাকবে বলে জানালেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১০ সদস্যের পুলিশের টিম কক্সবাজারে পৌঁছে গেছে। তারা কক্সবাজার স্টেশন, প্ল্যাটফর্মসহ রেললাইনের নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করবে। এ ছাড়া আরও ১০ সদস্যের পুলিশ থাকবে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে।’

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ভ্যাটসহ ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া এক হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া দুই হাজার ৩৮০ টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

Source link

Related posts

হরতাল-অবরোধে প্রায় ফাঁকা চট্টগ্রাম, ছাড়েনি দূরপাল্লার বাসও

News Desk

মিয়ানমারকে ‘বিশ্বাস করতে পারছেন না’ রোহিঙ্গারা

News Desk

এন্ড্রু কিশোরের নামে ভবনের নামকরণ

News Desk

Leave a Comment