অবশেষে পূর্ণতা পাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (চমেবি)। এক হাজার ৮৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে হবে এক হাজার ২০০ বেডের হাসপাতাল। পাশাপাশি বিভিন্ন চিকিৎসকের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর লক্ষ্যে ১০ ফ্যাকাল্টিসহ ৬৯টি চিকিৎসা বিভাগ থাকবে। ২৩ দশমিক ৯২ একর জমির ওপর ২৭টি ভবন হবে। এর মধ্যে ১৫তলা ভবন ১১টি, ১০তলা একটি, দোতলা দুইটি, একতলা ভবন ১৩টি। কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত চার বছর। প্রতি বছর ৭৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। চলতি মাসেই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হবে কর্মযজ্ঞ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিগগিরই নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। আগামী মাসে কর্মযজ্ঞ শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সুফল পাবেন চট্টগ্রামবাসী।’
এক হাজার ২০০ বেডের হাসপাতাল হলে সাধারণ মানুষ পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা পাবেন জানিয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘এখানে বিশেষ থেকে জেনারেল সেবা, সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়, আশা করছি তার চেয়েও উন্নত চিকিৎসাসেবা এখানে দিতে পারবো আমরা। বলা চলে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের সেবা মানুষ পাচ্ছেন, একই ধরনের সেবা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও পাওয়া যাবে।’
গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে এক হাজার ৮৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন।
অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে ১২০০ শয্যার হাসপাতাল ভবনসহ ১১টি ১৫তলা ভবন রয়েছে। অন্যান্য অবকাঠামোর মধ্যে প্রশাসনিক ভবন একটি, একাডেমিক ভবন এবং ডিনস অফিস একটি, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, টিএসসি, প্রার্থনাকক্ষ, কনভেনশন হল এবং টিচার্স ক্লাব/লাউঞ্জ একটি, বিআইটিআইডি হাসপাতাল ভবনের পাঁচ তলা থেকে ১০ তলা ঊর্ধ্বমুখী ছয়টি ফ্লোর সম্প্রসারণ একটি। এ ছাড়া দোতলা ভিসি বাংলো একটি, ১৫তলা প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, ডক্টরস এবং অফিসার্স কোয়ার্টার একটি, ছাত্রদের হোস্টেল ও ছাত্রী হোস্টেল, আইএইচটি শিক্ষার্থী ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক হোস্টেল ও নার্সেস ডরমিটরি, যার সবকটি ১৫তলা ভবন হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন চিকিৎসকের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর লক্ষ্যে ১০ ফ্যাকাল্টিসহ ৬৯টি চিকিৎসা বিভাগ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে সংসদে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০১৭ সালের ১৭ মে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস এবং বিএসসি (অনার্স) ইন নার্সিং ও বিইউএমএস (ব্যাচেলর অব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি) কোর্সের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হন। ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি সরকারি এবং ৩৫টি বেসরকারি। তার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ ১৬টি। এর মধ্যে সরকারি ছয়টি এবং বেসরকারি ১০টি। এছাড়া ডেন্টাল কলেজ দুটি, ইনস্টিটিউট (এমডি কোর্স) একটি, নার্সিং কলেজ ২০টি, হেলথ টেকনোলজি পাঁচটি, ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ একটি এবং ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজি একটি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষে তিন হাজার ৫৭৬ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষা নেওয়া, ফল ঘোষণা, শিক্ষার মান তদারকি সবগুলোই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত চার দফায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে এক কোটি ৪৪ লাখ ৫০০ টাকা গবেষণা অনুদান পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যা ১৬৯ জন চিকিৎসকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে যারা তিন দফায় গবেষণা অনুদান পেয়েছেন তাদের গবেষণা সম্পর্কিত প্রবন্ধ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা অনুদানের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩২ লাখ টাকা দেওয়া হয় ২২ জনকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৩ জনকে দেওয়া হয় ৪১ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০ জনকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৪ জনকে দেওয়া ৪৬ লাখ টাকা।
প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার আন্তরিক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’