পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো অটো পাসে আগ্রহী নয় শিক্ষা বোর্ড। প্রয়োজনে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য শিক্ষাবর্ষের শেষ দিন পর্যন্তও অপেক্ষা করবে তারা। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুনে এসএসসি এবং আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই পরীক্ষা হয়তো আয়োজনের সুযোগ নেই। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ দিন অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস পর্যন্তও যদি অপেক্ষা করে পরীক্ষা নেয়া যায় তাহলেও পরীক্ষা নিয়েই শিক্ষার্থীদের সনদ দেবে শিক্ষা বোর্ড। তবুও অটো পাসে ফিরতে চায় না কোনো শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল-কলেজ খোলারা পর এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ দিনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে দুই পরীক্ষাই নেয়া হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয়েছে আগামী ২২ মে পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় তাহলে প্রয়োজনে পরীক্ষা আরো পিছিয়ে দেয়া হবে। তবুও অটো পাসে আগ্রহী নয় কোনো শিক্ষা বোর্ড।
যদিও গত বছরের (২০২০ সালে) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন, যাদের সবাই পাস করেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব না কমায় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এই ফল প্রকাশিত হয়েছিল।
এ দিকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের ফরম ফিলাপের সময় করোনার কারণে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও তা শেষ করা যায়নি। করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরম ফিলাপ স্থগিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে করোনা কমলে পুনরায় সময় বাড়িয়ে এসএসসির ফরম ফিলাপের সময় দেয়া হবে। অর্থাৎ আগের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে এ বছরও এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না। অন্য দিকে করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সময় বাড়ানো ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। তাই চলতি বছরের নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর ছাড়া এই পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না।
করোনার এবং বাস্তব অবস্থার আলোকেই এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছেয়ে গেলেও গত বছরের মতো ‘অটো পাস’ পদ্ধতিতে ফলাফল না দিয়ে এই পাবলিক পরীক্ষা দু’টি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এই দু’টি পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সম্পন্ন করেই পরীক্ষা দু’টি নেয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে বছরের শেষ দিকে হলেও দু’টি পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৩ মে যদি স্কুল-কলেজ খোলা যায়, তাহলে সেপ্টেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে।
সর্বশেষ ছুটির ঘোষণা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিনের সিলেবাস শেষ করতে সময় যাবে আগামী ২৩ জুলাই। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হলেও আগস্ট মাসের শেষে কিংবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে পরীক্ষা নিতে হবে। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যাবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন বলেন, এ বছর এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করব না। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা ছাড়াই সার্টিফিকেট নিয়ে যাক। শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বের সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হলেই এসএসসি শিক্ষার্থীরা ৬০ দিন এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীরা ৮০ দিনের জন্য ক্লাস করবে। পরবর্তী সময়ে পাঠ্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরীক্ষা নেয়া হবে।