নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মোট ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছে। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে কোনো নাম জমা দেয়নি।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৩৯টি। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল অনুসন্ধান কমিটি।
অনুসন্ধান কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম বিকেল পাঁচটার পর সাংবাদিকদের বলেন, ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন। এ ছাড়া ছয়টি পেশাজীবী সংগঠন থেকে প্রস্তাব এসেছে। এই পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে বিএমএ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনও আছে।
এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক বড় সংখ্যায় প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম। এগুলো এসেছে মূলত ই-মেইলে। তবে মোট কতজনের প্রস্তাব এসেছে, সেটি তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে শফিউল আজিম বলেন, নামগুলোর তালিকা করে এখন অনুসন্ধান কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে ইসি গঠনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে প্রথমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ করেছিল অনুসন্ধান কমিটি। এরপর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিকানায় গত বুধবার চিঠি দিয়ে নাম দেওয়ার অনুরোধ করে কমিটি।
চিঠিতে প্রতিটি দলকে আজ শুক্রবার বিকেলের মধ্যে অনধিক ১০ জনের নাম (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি) পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে দলগুলোর যে কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে, সে ঠিকানায় ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
নাম জমা দেওয়ার শেষ দিনে আওয়ামী লীগ নেতারা আজ দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গিয়ে নাম জমা দিয়ে আসেন। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ ও উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রস্তাব জমা দিয়ে আসেন।
জানতে চাইলে অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে তাঁরা বদ্ধ খামে নামগুলো দিয়ে এসেছেন। সেখানে কাদের নাম আছে তা তিনি জানেন না।
শেষ দিনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি)সহ বেশির ভাগ দল নাম জমা দেয়।
আগের দিন বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ) অন্তত পাঁচটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছিল।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাম দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটির কাছে কোনো নাম জমা দেবেন না।
বিএনপি ছাড়াও তাদের জোটে থাকা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আরও তিনটি দলও নাম দেবে না। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিও (বাংলাদেশ ন্যাপ) নাম দেবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে আগামীকাল শনিবার দুই দফায় এবং পরদিন রোববার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে অনুসন্ধান কমিটি। ইতিমধ্যে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার পর সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।