হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে চলছিল অস্ত্রোপচার। এমন সময় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অস্ত্রোপচার কক্ষে গিয়ে হাজির অভিযান টিম। এ সময় বেরিয়ে আসেন হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ (অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা)। দেখতে চাওয়া হয় তার সনদ। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করেছেন জানতে চাওয়া হয়। উত্তর জানান, তিনি এইচএসসি পাস করেছেন। আর কোনও সনদ নেই। শুধু চোখের দেখা অভিজ্ঞতা থেকেই অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) ইনচার্জ। ঘটনাটি কুমিল্লার আদর্শ হাসপাতালে। এরপর এক লাখ টাকা জরিমানা করে সুজন নামের ওই ব্যক্তিকে ওই পদ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সোমবার দুপুরে কুমিল্লার মনোহপুর এলাকার এই হাসপাতালে অভিযানের পর বেরিয়ে আসে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা। এ সময় হাসপাতালের ফার্মেসিতেও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়। এসব অনিয়মের অভিযোগে হাসপাতালকে এক লাখ টাকা এবং ফার্মেসিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে দাম বেশি রেখে দেওয়া হচ্ছিল ডিসকাউন্ট (মূল্য ছাড়)। এ ছাড়াও অতিরিক্ত দামে করা হচ্ছিল স্বাস্থ্য পরীক্ষা– এসব অভিযোগে কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর এলাকায় জেলা সদর হাসপাতালের পাশের ক্লাসিক কনসালটেশন অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার বেলা ৩টায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. মেহেদী হাসান ও ডা. মো. আবদুল কাইয়ুম।
আছাদুল ইসলাম জানান, এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরেই মূল্য তালিকায় প্রদর্শিত দামের তুলনায় বেশি দাম রেখে তা থেকে ছাড় দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এতে ভোক্তা প্রতারিত হতো। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইদিন একই এলাকার আদর্শ হাসপাতালে অভিযান করা হয়৷ হাসপাতালের ফার্মেসিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালের ভেতরের এক্স-রে কক্ষের রশ্মি নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এক্স-রে বৈদ্যুতিক লাইন খোলা অবস্থায় পড়ে ছিল। ল্যাবও অনেক ছোট। হাসপাতালের সিটি স্ক্যানের ছিল না কোনও অনুমতি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি তারা অন্য কাউকে ভাড়া দিয়েছে। ভাড়া দেওয়ারও কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেনি৷ এ ছাড়াও হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অযোগ্য ব্যক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছিল। তাই এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাদের সিটি স্ক্যান সেন্টার ও এক্স-রে কক্ষ সিলগালা করা হয়েছে।
মেডিক্যাল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আদর্শ হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ সুজনের কোনও সনদ নেই৷ তাকে আমরা দায়িত্ব থেকে দূরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’