নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। এতে করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কর্মী দেলোয়ার হোসেন ওরফে পাশা (৪৫)।
এর আগে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের কারণে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে লুৎফুল হাবিব রুবেলের লোকজন তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দলীয় চাপ আর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন প্রতিমন্ত্রী পলক। এ কারণে পলক তার শ্যালক রুবেলকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। পরে রবিবার (২১ এপ্রিল) এক ভিডিও বার্তায় রুবেল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে দুপুরে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখের কাছে তার পক্ষে প্রত্যাহারপত্রটি জমা দেন সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ উদ্দিন।
প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের পক্ষে রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে প্রত্যাহারপত্র জমা দিয়েছেন তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ উদ্দিন। এখন শুধু দেলোয়ার হোসেনই প্রার্থী থাকলেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় আছে। দেলোয়ার হোসেন যদি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন, তাহলে পরদিন মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
প্রত্যাহারপত্রে জানানো হয়, আমি মো. লুৎফুল হাবিব সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ইং এ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে আমার নির্বাচন করা সম্ভব নয়। অতএব, বিধায় প্রার্থনা এমতাবস্থায় আমার জমাকৃত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নপত্রটি প্রত্যাহারপূর্বক আমাকে উক্ত নির্বাচন হতে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে মর্জি হয়।
এর আগে সকালে ভিডিও বার্তায় লুৎফুল হাবিব রুবেল বলেন, সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনও মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবে না। তারই আলোকে এই ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আমি ২০০২ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে রয়েছি। ২০০৫ সালে সিংড়া গোল-ই আফরোজ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের পর পর তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। গত ৩ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করি। পরে গত ৮ তারিখে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সাবমিট করি। তারপর থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন মহল সক্রিয় আছে।
এদিকে বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন পাশা। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন তার দীর্ঘদিনের। যদিও আগে কখনও কোনও নির্বাচনে অংশ নেননি। একবার ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও দলীয় চাপের কারণে করেননি। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হতে যাওয়ার খবরটি তিনি রবিবার দুপুরেই শুনেছেন।
দেলোয়ার দাবি করেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসার সক্ষমতা তার ছিল। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই উপজেলা চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার প্রতিমন্ত্রী পলক হাসপাতালে তাকে দেখতে আসায় খুশি হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দেলোয়ার। তিনি বলেন, ‘সেদিন স্যার (প্রতিমন্ত্রী) দেখতে এসেছিলেন, এতে আমি খুশি।’
দেলোয়ার বলেন, ‘আমি সিংড়াকে একটা স্মার্ট ও আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। আমি নিজে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। তাই সিংড়াকে সন্ত্রাসমুক্ত করে গড়ে তুলতে কাজ করবো। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পাবো বলে আমি আশা করি।’