অবশেষে সারদায় কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ

অবশেষে সারদায় কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অবশেষে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের (টিআরসি) ১৬৭তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে এই পাসিং আউটে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা। প্রধান অতিথি কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ, কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

পুলিশ একাডেমি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ২৪ জুন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলের ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০ ডিসেম্বর। ১৯ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ ডিসেম্বর ‘অনিবার্য কারণবশত’ এই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৩ জানুয়ারি প্রশিক্ষণরত ৮ পুলিশ কনস্টেবলকে অব্যাহতি দিয়ে একাডেমি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এদিকে, ‘টিকে থাকা’ ৩৩৪ জন পুলিশ কনস্টেবল স্বস্তি পেয়েছেন। যদিও শেষ মূহূর্তে কী হয় তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেকে। আপাতত পুলিশ কনস্টেবলদের একটা ‘গতি’ হলেও প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট উপপরিদর্শক (এসআই) এবং সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) ভাগ্যে কী রয়েছে তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। ‘বিধ্বস্ত’ মন নিয়ে তারা এখনও একাডেমির মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন।

প্রশিক্ষণে ৩৩৪ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে সাজ্জাদুল ইসলাম (পিএ/৫৪৪) বেস্ট টিআরসি হিসেবে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে বেস্ট একাডেমিক হিসেবে সুমন আলী (পিএ/৫৪২), বেস্ট ইন ফিল্ড অ্যাক্টিভিটিজ এবং বেস্ট শুটার পৌরব চন্দ্র রায় (পিএ/১৪৫) নির্বাচিত হন।

এদিকে, ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৭১ জন শিক্ষানবিশ এএসপির এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় একাডেমিতে। গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ এখনও শেষ হয়নি। ২০ অক্টোবর এএসপিদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের রাতে হঠাৎ করে এই পাসিং আউট অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর ২৪ নভেম্বর আবারও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হলেও ১৮ নভেম্বর সেটি আবারও স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ১৫ ডিসেম্বর ব্যাচের ৭১ এএসপির মধ্যে ২৫ জনের কাছে কৈফিয়ত তলবের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘প্যারেডে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটা’র অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের জবাব দিতে তিন দিন সময় দেওয়া হয়। এএসপিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই লিখিত জবাব দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতর থেকে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি।

এ ছাড়া, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একাডেমিতে ৮২৩ জন ক্যাডেট এসআইয়ের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। গেলো বছরের ৪ নভেম্বর প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। গত ২৬ নভেম্বর সমাপনী কুচকাওয়াজের জন্য দিন ঠিক করা হলেও পরে স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সম্প্রতি চার দফায় মোট ৩২১ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সবশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর ৮ জনের কাছে ব্যাখা তলবের পর তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের বিরুদ্ধে নাস্তা না খেয়ে বিশৃঙ্খলা এবং প্রশিক্ষণ চলাকালে হইচই করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ব্যাচে এখন ৫০২ জন এসআই ‘টিকে আছেন’।

সাধারণত পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে পুলিশ সদস্যরা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত হন এবং মাঠপর্যায়ে কাজের সুযোগ পান। তারও এক বছর পর তাদের চাকরি স্থায়ী হয়। প্রশিক্ষণের মেয়াদ শেষেও প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার এমন নজির পুলিশ একাডেমিতে এবারই প্রথম।

যারা চাকরি হারাচ্ছেন, তাদের দাবি, যেসব কারণ দেখিয়ে শোকজের পর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে তেমন কোনও ঘটনাই ঘটে না। রাজনৈতিক কারণে ‘কিছু একটা’ কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে বলে তাদের দাবি। যদিও পুলিশ সদর দফতর তা অস্বীকার করছে।

প্রশিক্ষণরত এক এসআই জানান, কনস্টেবলদের পাসিং আউট হয়েছে রবিবার। এএসপিদের তারিখ ঠিক হয়নি। এসআইদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ১৫ জানুয়ারি হতে পারে বলে তাদের জানানো হয়েছে। যদিও কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। তাই তাদের শঙ্কা কাটছে না। কারণ, এর আগে তারিখ ঠিক করা হলেও অনুষ্ঠান হয়নি। পরে ৯ জানুয়ারি সমাপনী হতে পারে বলেও তারা শুনেছিলেন। কিন্তু সেদিনও হয়নি। ফলে এসআইরা এখনও শঙ্কায় আছেন।

প্রশিক্ষণরত এক শিক্ষানবিশ এএসপি জানান, তিনিসহ মোট ২৫ জনকে শোকজ করা হয়েছে। যে অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে সেরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তারা জবাব দিয়েছেন। তাতে উল্লেখ করেছেন যে, মাঠে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। একাডেমি কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়েছে। তবে তাদের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি।

ওই এএসপি বলেন, ‘আসলে আমরা ধরেই নিয়েছি যে আমাদের চাকরি থাকছে না। কিন্তু পেছনে কোনও কারণ আমি অন্তত খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, আমার কোনও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। আমি কয়েকটি সরকারি চাকরি বদল করেছি। মেধার জোরেই সেগুলো পেরেছিলাম। সবশেষ বাবা-মায়ের ইচ্ছায় পুলিশে আসি। এখানে এসে এমন বিপদে পড়ে গিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাঠের প্রশিক্ষণ এত কঠিন যে আমরা প্রতিটা দিন গুনেছি। এভাবেই প্রশিক্ষণের সময় শেষ করেছি। সময় শেষেও আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। মাঠে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানিই যে, এই পরিশ্রমের কোনও মূল্য পাবো না, তাই এই পরিশ্রমটা আরও কঠিন হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত মন নিয়ে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। বেরও তো করে দিচ্ছে না।’

Source link

Related posts

কুষ্টিয়াসহ হাসপাতালে সংযুক্ত হলেন ৫২ জন চিকিৎসক

News Desk

দ্বিতীয় দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে বাণিজ্য মেলায়

News Desk

চসিকের পৌণে ১১ লাখ টাকা গৃহ কর আদায়

News Desk

Leave a Comment