পঞ্চগড়ে পরিবহন শ্রমিকদের দুটি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে জেলা শহরের নানা স্থানে সড়ক অবরোধ চলছে শুক্রবার রাত ১০টা থেকে। শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত সেই সড়ক অবরোধ চলমান থাকায় বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা।
পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের আবেদনে উচ্চ আদালতের একটি আদেশে পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।
এ নিয়ে বিরোধের জেরে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা।
অবরোধের কারণে পঞ্চগড় থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস, মিনিবাস ছেড়ে যেতে পারেনি। বাইরে থেকে কোনো বাস জেলাশহরে ঢুকতে পারেনি।
পুলিশ ও উভয় শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।তাদের কার্যক্রম চলছে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে।
পরে ২০০০ সালে শ্রমিকদের একটি অংশ পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন নামে আরেকটি সংগঠন শুরু করেন। পরে নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়ে তারা শহরের কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে কার্যক্রম শুরু করেন।
পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে এসে কজন শ্রমিক পঞ্চগড় বাস, মিনিবাস ও কোচ শ্রমিক ইউনিয়ন নামে আরেকটি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বাস টার্মিনালে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
এ নিয়ে ২০১২ সালে পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নকে অবৈধ দাবি করে শ্রম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।পরে ২০১৪ সালে পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি মরহুম রেনু মিয়া ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নকে অবৈধ দাবি করে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।
আইনি লড়াইয়ের মধ্যে উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেন, পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের চলমান কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
আর এ নিয়ে শুরু হয় পরিবহন শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব, যা পরে সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে গড়ায়।
পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুরগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের কি হয়েছে জানি না। আমার জরুরি কাজ থাকায় দিনাজপুর যেতে হবে। কিন্তু শ্রমিকরা আমার মত হাজার হাজার যাত্রীকে অবরোধ করে রেখেছেন। এটা কে দেখবেন? আকস্মিক সড়ক অবরোধ মানেই জনদুর্ভো। এ নিয়ে প্রশাসনের আরও সতর্ক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।’
পঞ্চগড় ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়ে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বাস, মিনিবাসেরও রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। কিন্তু আদালতের আদেশ না মেনে পঞ্চগড় মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের নির্বাচন করছিলেন। এর বিপরীতে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত নির্বাচনী তফশিল স্থগিত করা হয়েছে।’
পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে গভীরভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আমাদের সাথে দ্বিমুখী আচরণ করছেন। আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে।’
পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, ‘আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার পর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কিছুই করার সুযোগ নেই।’
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসূফ আলী বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। আশা করি শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’