টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা বাবা-মেয়েসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা। তবে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে তিন জনের মৃত্যুর দায় কার, এমন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার হাতিয়ায় ঢাকা-উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল রেললাইনের অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন ঘাটাইল উপজেলার কদমতলীর গারট্ট গ্রামের অটোরিকশাচালক তায়েবুল হোসেন (৫৫) ও তার মেয়ে তাহমিনা (২৫) এবং তাহমিনার ১৪ মাস বয়সী ছেলে তাওহীদ।
এদিকে, মৃত শিশুর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়িতে নিতে চাইলে স্বজনদের সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে তিন জনের লাশ পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তাহমিনা কয়েকদিন আগে স্বামী খায়রুল ইসলামের বাড়ি কালিহাতীর হাতিয়া উত্তরপাড়া থেকে বাবার বাড়ি ঘাটাইলে বেড়াতে যান। সেখান থেকে সোমবার দুপুরে বাবা তায়েবুল হোসেনের অটোরিকশাযোগে ১৪ মাস বয়সী ছেলে তাওহীদকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ফিরছিলেন। অটোরিকশাটি স্বামীর বাড়ির কাছাকাছি হাতিয়া অরক্ষিত রেলক্রসিং পার সময় ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়।
অটোরিকশাটিকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে টেনে নিয়ে রেললাইনের পাশে ফেলে দেয় ট্রেন। এতে অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তায়েবুল ও তার নাতি তাওহীদ মারা যায়। তাহমিনাকে গুরুতর অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ট্রেনের ধাক্কায় বাবা-মেয়েসহ ৩ জনের মৃত্যু
তায়েবুলের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে আমার ভাই ও ভাতিজি এবং নাতি মারা গেছে। এই দায় রেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এখানে গেটম্যান থাকলে আজ তারা মারা যেতো না। শিশুর লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়িতে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ শিশুটির লাশ নিয়ে গেছে। শিশুর লাশের ময়নাতদন্ত করে কি করবে তারা?’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, হাতিয়া এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে লোকজন মারা যাচ্ছেন। তারপরও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই রেলক্রসিং ছাড়াও জেলার বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান। ফলে বিভিন্ন সময় ট্রেনে কাটা পড়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন।
সম্প্রতি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হাতিলা এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রী ও তাদের এক শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে সোমবার আরও তিন জনের মৃত্যু হলো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় রেলক্রসিংয়ে দিনের পর দিন দুর্ঘটনায় লোকজন মারা গেলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই দায় রেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান রাখার দাবি জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনের মাস্টার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘দুপুরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনে যাচ্ছিল। এ সময় রেললাইনের হাতিয়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিং দিয়ে অটোরিকশা পার হওয়ার সময় ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।’
ঘারিন্দা রেলওয়ে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনের ধাক্কায় এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’