বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে বরগুনায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও বইছে হালকা দমকা হাওয়া। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
টানা বর্ষণে বোরোসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই মাঠে থাকা ৮০ শতাংশ পরিপক্ক বোরো ধান কাটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মুগ ডালসহ অন্যান্য পরিপক্ক রবি ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাইকিং করে কৃষকের কাছে তথ্য পৌঁছাতে বলেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কার্যালয় থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বাড়লে জেলা প্রশাসন দুর্যোগবিষয়ক সভা করে প্রস্তুতি নেবে। বরগুনায় ৬২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোতে দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ গবাদি পশুও রাখা যাবে।
বরগুনা সদর উপেজলা বড়ইতলা গ্রামের কৃষক মো. শাহেদ বলেন, ‘৩০ শতক জমিতে এ বছর মুগ ডাল আবাদ করেছি। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।’
নলী গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান বলেন, ‘দুই একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছিলাম। বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। মাঠে এখনও অনেক তরমুজ রয়ে গেছে। টানা বর্ষণ হলে মাঠের তরমুজ পচে যাবে।’
ঢলুয়া এলাকার কৃষক জয়নাল বলেন, ‘মাঠে পাকা ধান। আর কয়েকদিন পরই ধান কেটে ঘরে উঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলে আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।’
বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলার দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। টানা বর্ষণ হলে কৃষকদের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে তাদের পাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমবে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছেন। জেলার চার উপজেলায় আমাদের আট হাজার ৪৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরগুনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুর বলেন, ‘যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বোরা ধান বা রবি ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।’
রেড ক্রিসেন্ট বরগুনার সহকারী পরিচালক মাহবুবুর আলম বলেন, ‘আমাদের তিন শতাধিক সদস্যকে বার্তা দেওয়া আছে। সংকেত বাড়লে আমরা মিটিং ডেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক ও আবহাওয়া বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছি। যদি ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বাড়ে তাহলে জেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’