সারাদেশের মতো সাভার ও ধামরাইয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। এবারের দুর্গাপূজায় সবার নজর কেড়েছে ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী বণিক বাড়ির দুর্গা প্রতিমা। এটি অষ্টধাতুর তৈরি। উচ্চতা ৮ ফুট ১ ইঞ্চি। প্রতিমাটি দেশের সবচেয়ে বড় বলে দাবি করেছেন অনেকে। দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা।
২০১৭ সালে তৈরি করা প্রতিমাটি দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপে প্রতিস্থাপন করা হয়। এবারও বণিক বাড়ির পূজামণ্ডপে এটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একদিকে চলছে পূজা-অর্চনা। অন্যদিকে প্রতিমা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা।
প্রতিমার স্বত্বাধিকারী সুকান্ত বণিক বলেন, ‘টানা আট মাস কাজ করার পর ২০১৭ সালে ৫২০ কেজি ওজনের প্রতিমাটি তৈরি করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২৫ লাখ টাকার মতো। অষ্টধাতুর প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্বর্ণ, রুপা, পারদ, দস্তা, সিসা, লোহা ও তামা। কারণ অষ্টধাতু আটটটি গ্রহের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী।’
প্রায় ১০০ বছর ধরে বণিক বাড়িতে দুর্গাপূজা হচ্ছে জানিয়ে সুকান্ত বণিক বলেন, ‘আগে মাটির প্রতিমাতে পূজা হতো। তবে ছোট পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী প্রতিমা তৈরির চিন্তা আসে। পরবর্তীতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করি। দুর্গার যে রূপ সেটিকে চিন্তা করে প্রতিমা গড়া হয়েছে, অবয়বেও বাংলার প্রচলিত রীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্ম এই প্রতিমা দিয়ে যাতে পূজা করতে পারেন, সেজন্য তৈরি।’
আমাদের পরিবার প্রায় ২০০ বছর ধরে তামা-কাসাসহ বিভিন্ন ধাতুর পণ্য তৈরি করছে উল্লেখ করে সুকান্ত বণিক আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করে থাকি। দুর্গা প্রতিমাটি আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে প্রতিমাটি নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়। পূজা শেষে প্রতীকী বিসর্জনের পর প্রতিমা আবার সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পূজার কয়েকদিন সবার পরিদর্শনের সুযোগ থাকে। অষ্টধাতুর প্রতিমাকে সবচেয়ে পবিত্র মনে করা হয়। এজন্য পূজা দিতে ভিড় করেন অনেকে।’
সরেজমিনে বণিক বাড়ির পূজামণ্ডপে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের ভিড়। ব্যতিক্রমী এই প্রতিমা দেখে মুগ্ধ অনেকে। কালামপুর থেকে আসা চন্দন কুমার বলেন, ‘গত বছর থেকে এখানে প্রতিমা দেখতে আসি। এই বাড়ির মন্দির অনেক পুরোনো। বিশেষ করে অষ্টধাতুর প্রতিমায় পূজা করতে আসি। মনে প্রশান্তি পাই।’
ধামরাইয়ের মডেল টাউন এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে প্রতিমা দেখতে আসা সাধন চন্দ্র রায় বলেন, ‘অষ্টধাতুর এত বড় প্রতিমা আশপাশের কোথাও নেই। দুর্গা মাকে খুশি করতে এখানে পূজা করতে আসি।’