Image default
বাংলাদেশ

অসময়ে পদ্মায় ভাঙন, নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসের ভাঙনে প্রায় ১৪০ একরের মতো কৃষিজমি বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় বেড়েছে ভাঙনের মাত্রা। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে তিন ইউনিয়নের আরও সহস্রাধিক পরিবার। 

গত রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট থেকে ছোটভাকলার অন্তারমোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার কৃষিজমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পাড়ের অনেক জায়গা দেবে গেছে। সরিষা, ভুট্টা ও টমেটোসহ নানা সবজি তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়ার কালাম শেখ বলেন, প্রতি বছর বর্ষায় ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এবার শুকনো মৌসুমে গত ২৫-৩০ দিন ধরে ভাঙছে। এক মাসে প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙলে আরও কিছুই থাকবে না। এক বছরে অন্তত ২০০ পরিবার অন্যত্র সরে গেছে। এখনও অনেকে ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এখন আমরাও এখান থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নতুনপাড়া, ঢল্লাপাড়া, বাহিরচর দৌলতদিয়া, সাহাজদ্দিন বেপারীপাড়া, নাসির সরদারপাড়া, দেবগ্রাম ইউপির কাওয়ালজানি ও দেবগ্রাম এবং ছোটভাকলা ইউপির চর বরাট, ছোটো জলো ও কাওয়ালজানিতে (আংশিক) ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সাহাজদ্দিন বেপারীপাড়ার গৃহবধূ শেফালী আক্তার বলেন, ‘আমার অহন কিছুই নাই। প্রায় আড়াই বিঘা জমি ছিল, ঘর ছিল। গত বছর ভাঙনে সব শেষ হইয়া গেছে। অহন এলাকার একজনের বাড়িতে দুই ছাওয়াল নিইয়া আছি। যহন বাতাস হয়, তহন বেশি ভাঙে। কয়েক দিন ধইরা খুব বেশি বাতাস ছুটছে।’

দেবগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, কাওয়ালজানি এলাকায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র চলে গেছে প্রায় ৩০ পরিবার। এখনও প্রায় ৩০০ পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। এছাড়া ৫০ একরের মতো কৃষি জমি বিলীন হয়েছে।

ছোটভাকলা ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, চর বরাট, ছোট জলো ও কাওয়ালজানির আংশিক এলাকায় ভাঙছে। বর্ষার মৌসুমে বেশি ভাঙলেও বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙছে। ভাঙনে প্রায় ৪০ একরের মতো ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে সরে গেছে প্রায় ২০টির মতো পরিবার। ভাঙন ঝুঁকিতে আছে দুই শতাধিক পরিবার। এ বিষয়ে আমরা উপজেলার বিভিন্ন সভায় উত্থাপন করেছি। 

পদ্মায় ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ১৪০ একর কৃষিজমি

দৌলতদিয়া ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, শুষ্ক মৌসুমেও নতুন পাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া, ঢল্লা পাড়া, বাহির চর দৌলতদিয়া ও নাসির সরদার পাড়ার মাথায় বেশি ভাঙছে। এক মাসে প্রায় ৫০ একরের বেশি কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। প্রায় ৫০টির মতো পরিবার ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ৫০০ পরিবার। নদী শাসনের কথা বার বার আলোচনায় আসলেও অগ্রগতি হয়নি। অবিলম্বে নদী শাসনের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আরও অনেক ক্ষতি হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, দৌলতদিয়া থেকে ছোটভাকলার অন্তারমোড় পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড় ধরে অনেক কৃষি জমি ভাঙছে বলে শুনেছি। কী পরিমাণ জমি বিলীন হয়েছে, তার সঠিক তথ্য নেই। তবে দৌলতদিয়া ইউনিয়নে গত ৭ বছর আগে আবাদি কৃষি জমি ছিল প্রায় ৩৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে বিলীন হয়েছে ১৪০০ হেক্টর। এ সংক্রান্ত একটি তথ্য জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। 

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান বলেন, নদী ভাঙনের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু করণীয় থাকলে সেটাও করা হবে।

Source link

Related posts

নোটিশ দিয়েও সরানো যাচ্ছে না রেলস্টেশনে অবস্থিত স্মৃতি সংসদটি

News Desk

করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল বাংলাদেশ, আক্রান্তের হার কিছুটা কম

News Desk

করোনায় আরও ৬৩ মৃত্যু, শনাক্ত ৩৮৪০

News Desk

Leave a Comment