মা বাঁচাও, বাঁচাও বলে ছেলে-মেয়ে চিৎকার করলেও কিনারে তুলতে পারেননি মা-বাবা। সীমান্তের নীলকমল নদে নিখোঁজ রয়েছে দুই শিশু সন্তান। এ কথা মনে হতেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সামিনা বেগম। আর হতভম্ব বাবা রইচ উদ্দিন বুক চাপড়ে কাঁদছেন। তাদের শোকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সরকারটারী গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার (১ জুলাই) গভীর রাতে দালালের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকালে বিএসএফের ধাওয়ায় নীলককমল নদ পার হওয়ার সময় পানিতে ডুবে যায় দুই শিশু। মা-বাবা সাঁতরে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করতে সক্ষম হলেও সন্তানরা নদের পানিতে নিখোঁজ হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি।
বাবা রইচ উদ্দিন দাবি করে, শুক্রবার গভীর রাতে দালাল জায়দুল ও গেদার মাধ্যমে ভারতের হরিয়ানা রাজস্থান সীমান্তের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ভাটায় কাজ শেষে কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তপথে বাড়িতে ফিরছিলেন। স্ত্রী সামিনা বেগম, আট বছরের মেয়ে পারভীন খাতুন ও চার বছরের ছেলে সাকেবুর হাসানকে নিয়ে নীলকমল নদের তীর দিয়ে সীমান্ত পার হচ্ছিলেন। এ সময় টহলে থাকা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ টের পেয়ে বাঁশি বাজালে ধরা পড়ার ভয়ে সবাই নদে নেমে পড়েন। নদের স্রোতে নিখোঁজ হয় তাদের দুই সন্তান। সন্তানরা বাঁচানোর জন্য মা মা বলে চিৎকার করলেও অন্ধকারে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
রইচ উদ্দিনের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুকাতী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত একাব্বর আলী। দুই সন্তান হারিয়ে শোকাহত তার পুরো পরিবার।
শোকাহত এই বাবা বলেন, ‘ভারতের শেউটি ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর আমাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় দালালরা তড়িঘরি করে নদী পার হওয়ার জন্য বলে। আমি জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝপথে যাই। এ সময় আমার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামে। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে রাতের অন্ধকারে স্ত্রীর হাত থেকে আমার সন্তানরা নিখোঁজ হয়। পানিতে ডুবে অনেক চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করেছি। তাদের সন্ধান পাইনি। কষ্ট করে আমার স্ত্রীকে পার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। বাচ্চা দুইটা বেঁচে আছে, না মারা গেছে কোনও হদিস পাইনি।’
শনিবার রাত ৮টায় লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন বলেন, ‘ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে দুইটি শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিএসএফকে জানানো হয়েছে। তারা দুই শিশুর বিষয়ে জানাতে পারেনি।’