চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ (৩৮)। তিনি উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আজগর আলী সিকদারের বাড়ীর দানা মিয়া চৌকিদারের ছেলে। গত ৪ অক্টোবর থেকে ফিরোজ আহমেদ ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। অথচ পুলিশ বলছে, তিনি গত ১৮ অক্টোবর পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের বড় ঠাকুরপাড়া গ্রামে ডাকাতি করতে গেছেন।
ওই গ্রামে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফিরোজ আহমেদসহ ছয়জন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই টুটন মজুমদার।
এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাউজান থানার এসআই টুটন মজুমদার ফোর্স নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৩টা ২৫ মিনিটে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাউজান থানাধীন পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের বড় ঠাকুরপাড়া গ্রামের সুরেন্দ্র কারিগর মোড়ের দক্ষিণ দিকে বটগাছতলায় সড়কে অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে জানে আলম (৪৬), মো. আব্দুল্লাহ খোকন (৩৮) ও মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বাবুকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে দুটি দেশীয় তৈরি এলজি, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি রামদা, একটি লোহার তৈরি কাটার এবং একটি দা উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে মো. শাহ আলম, মো. ইউসুফ তালুকদার, জানে আলম, লোকমান প্রকাশ লাড্ডুম, জসিম ও মো. ফিরোজ আহমেদসহ (ফিরোজ মেম্বার) অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় এসআই টুটন মজুমদার বাদী হয়ে অস্ত্র ও দণ্ডবিধির ৩৯৯ ও ৪০২ ধারায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
গ্রেফতার হওয়া জানে আলমের স্ত্রী রুনা আকতারের দাবি, তার স্বামীকে ১৬ অক্টোবর নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের সামনে থেকে আটক করা হয়। প্রথম থেকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে পুলিশ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর ১৯ অক্টোবর রাউজান থানা পুলিশ জানে আলমকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে। পুলিশ বলছে, তাকে নাকি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন ইমোর মাধ্যমে বিএনপি নেতা ফিরোজ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ৪ অক্টোবর আমি ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে এসেছি। বর্তমানে আমি মক্কায় অবস্থান করছি। মক্কা থেকে কীভাবে রাউজানের বড় ঠাকুরপাড়ায় ডাকাতি করতে গেলাম। এ মামলাটি সাধারণ মানুষ করেনি। পুলিশ বাদী হয়ে করেছে। মামলার বাদী এসআই টুটন মজুমদারসহ মিথ্যা মামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।’
মামলার অপর আসামি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইউসুফ তালুকদার বলেন, ‘ফিরোজ আহমেদ ওমরাহ পালনরত অবস্থায় রাউজানে ডাকাতি করতে গিয়ে মামলার আসামি হয়েছেন। আমি চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করে মামলার আসামি হয়েছি। আমি নাকি রাউজানে ডাকাতি করতে গিয়েছি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৩-১৪ বছর আমি রাউজানে গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। এমনকি আমার মায়ের নামাজে জানাজা পর্যন্ত পড়তে যেতে পরিনি। অথচ আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। সবকটি মামলাই এটির মতো মিথ্যা ও গায়েবি।’
মামলার এজাহারে দেখানো ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার জানে আলম এর স্ত্রী রুনা আকতার বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর এলাকায় মাছের খামার আছে। গত ১৬ অক্টোবর সকালে মাছের প্রজেক্ট দেখাশোনা করে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার পথে নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের সামনে থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় তার মোটরসাইকেলে খোকন নামে একজন লোকও ছিল। পুলিশ ক্যাম্পের এসআই টুটন মজুমদার আমার স্বামীকে আটক করেছে। খবর পেয়ে ছেলে আরিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ১২টার সময় নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পে যাই। সেখানে খোকন ছিল। বাইরে আমার স্বামীর মোটরসাইকেল ছিল। পুলিশের কাছে মানিব্যাগ এবং মোবাইলও ছিল। ক্যাম্পে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানায় আমার স্বামীকে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছে।’
রুনা আকতার আরও বলেন, ‘আমি ওই দিন বিকেল তিনটায় রাউজান থানায় যাই। সেখানে পুলিশ আমাকে থানার ভেতর প্রবেশ করতে দেয়নি। থানার পুলিশের কাছ থেকে এসআই টুটন মজুমদারের নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমার স্বামী থানায় আছে বলে জানায়। আমি রাত ৯টা পর্যন্ত থানার সামনে বসে ছিলাম। থানার ওসি আমার স্বামীকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পর দিন ১৭ অক্টোবর এসআই টুটন মজুমদারকে ফোন করলে তিনি আমার স্বামীকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর আমি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলসহ সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করি। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) আমার স্বামীকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বলা হয়, ১৮ অক্টোবর রাতে ডাকাতি করতে গিয়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছেন তিনি।’
রুনা বলেন, ‘নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের সিসিটিভি ক্যামেরা এবং রাউজান থানার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তারা আমার স্বামীকে গুম করতে চেয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর করেনি।’
এ প্রসঙ্গে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই টুটন মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মামলায় ফিরোজ আহমেদ নামে একজনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি নাকি দেশে নেই। তবে নামগুলো আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে যদি এমন তথ্য উঠে আসে তাহলে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।’
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফিরোজ আহমেদকে আসামি করা হয়। তিনি এ মামলায় সংশ্লিষ্ট না হলে পরে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।’