Image default
বাংলাদেশ

আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে পাওয়া গেছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ট্রিপল মিউটেশন ভ্যারিয়েন্ট, যাকে বলা হচ্ছে বেঙ্গল স্ট্রেইন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেঙ্গল স্ট্রেইন অত্যন্ত মারাত্মক। এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ-ক্ষমতা প্রায় ৩শ গুণ। তারা বলছেন, ভারতে যে দুটো ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, তা সারাবিশ্বেই বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ভারতের এই ডাবল কিংবা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে লক্ষ্যে গতকাল রবিবার বাংলাদেশ সরকার নিকটতম প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। আপাতত ১৪ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। এ সময়কালে অবশ্য দুদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন অব্যাহত থাকবে।

গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ভারতসংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশে বেঙ্গল স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়া রোধেই এ সিদ্ধান্ত, জনিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মানুষ চলাচল বন্ধ থাকলেও এই ১৪ দিন সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।

এদিকে যেসব বাংলাদেশির ভারতে অবস্থানের ক্ষেত্রে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভিসার মেয়াদ, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষার সনদ এবং কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে দেশে ফেরার সুযোগ থাকছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, ভারতে বর্তমানে দুই হাজারের মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫শ জনই রোগী এবং ৫শ ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা দেশটিতে গেছেন প্রকৃতপক্ষে আসন্ন ঈদের বাজারকে সামনে রেখে।

কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের হাইকমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ভারতে বর্তমানে যেসব বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তারা দুই সপ্তাহের আগে ফিরতে পারবেন না। তবে এর আগেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে যাদের, কলকাতাস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনে তাদের যোগাযোগ করতে হবে। এখান থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা অনাপত্তিপত্র দেওয়া হলে দেশে ফেরা যাবে।

এদিকে আগের ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ আছে। ২৮ এপ্রিলের পর ভারতের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ থাকবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গতকাল বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ করার ক্ষমতা ৩শ গুণ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার অসম্ভব রকম সংক্রমণ ঘটছে, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ভারতে যে দুটো ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে-ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস, তা সারাবিশ্বে বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভারতের এই ডাবল কিংবা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস যেন কোনোভাবেই দেশে আসতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ডা. রোবেদ আমিন আরও বলেন, আগামী ২৮ এপ্রিল সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’ শেষ হবে। সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জনগণের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন পরিপূর্ণ সমাধান নয় এবং এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা যদি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করি, তা হলে আমাদের চিত্র পার্শ্ববর্তী দেশের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে পারে।

রোবেদ আমিন বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্ট যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। কোয়ারেন্টিন অবশ্যই ১৪ দিন হতে হবে। এর কমে কোয়ারেন্টিন সম্ভব নয়। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়, এতে আরও অনেক মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা যদি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জিনিসটি দেখতে চাই, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন হলে সবচেয়ে ভালো হয়। যদি তা না-ও হয়, যদি কেউ বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকেন তা হলেও ১৪ দিন কঠোরভাবে থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

Related posts

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফেঙ্গহি আজ ঢাকা আসছেন

News Desk

করোনায় একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু

News Desk

কবর থেকে তোলা হলো আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী সাকিবের মরদেহ

News Desk

Leave a Comment