এবার আফগানিস্তানের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের দুটি গ্রামের কিছু মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। শনিবার (৩০ মে) রাতে সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বে চাঁদ না দেখা যায়নি, এ জন্য এখানকার মানুষ সোমবার ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভোর রাতে হঠাৎ করে ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সাদ্রা দরবার শরিফের একটি পক্ষ। আফগানিস্তান, নাইজার ও মালিতে চাঁদ দেখা যাওয়ায় তারা ঈদ উদযাপন করছেন বলে জানান।
রবিবার (১ মে) সকালে হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফ মাদ্রাসা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের পীর মুফতি আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা ও শমেসপুর গ্রামের কিছু অংশের মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির হোসেন গাজী বলেন, ‘রবিবার সাদ্রার অল্প কিছু মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সোমবারও এখানে ঈদ হবে।’
এদিকে গত বছরের মতো এবারও বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগাম ঈদ উদযাপনকারীদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের মধ্যে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে সাদ্রা দরবারের বড় পীরজাদা পীর ড. মুফতি বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী বলেন, ‘হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি– এ তিন মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তেও যদি চাঁদ দেখা যায় আর সে সংবাদ যদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তেও পৌঁছায়, তাহলে পূর্ব প্রান্তের মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ এবং ঈদ করা ওয়াজিব।’
শনিবার আফগানিস্তান, নাইজার ও মালিতে চাঁদ দেখা গেছে। ওই সংবাদ নির্ভরযোগ্য সূত্রে পেয়ে আজ আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। পাশাপাশি ঢাকার সদরঘাটের খানকা, আসকোনা এবং পটুয়াখালীর বদরপুর দরবার শরিফে ঈদের জামাত হয়েছে। চাঁদ দেখার সংবাদটি যথাসময়ে পৌঁছে দিতে না পারায় অনেক গ্রামে ঈদ উদযাপন হয়নি। তারা পরবর্তী সময়ে ঈদ উদযাপন করবে।’
তবে ওই দরবার শরিফের আরেক পীর মো. আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঈদ করছি না। আফগানিস্তানে চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর পেয়ে আমার একজন চাচা কয়েকজন লোক নিয়ে ঈদ উদযাপন করলেও আমাদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। তাদের সিদ্ধান্তে ভুল আছে। আমরা সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভূগোল-বিজ্ঞান বুঝি। চাঁদ-সূর্য ওঠা এবং ডোবার একটা সময় আছে। নাসা এবং বিজ্ঞানীরা একমত যে, চাঁদ ছিল ৫ ডিগ্রিতে এবং সূর্য ছিল ৮ ডিগ্রিতে। মানে সূর্য থেকে চাঁদ ৩ ডিগ্রি এগিয়ে ছিল। সূর্য ও চাঁদ সমান সমান হচ্ছে আজ দুপুরে আমেরিকার শেষপ্রান্তে গিয়ে। সমান হওয়ার পর চাঁদ পেছনে থেকে যাবে সূর্য সামনে যখন চলে যাবে। তখন এটি হবে নতুন মাসের নতুন চাঁদ। তাই আমরা মনে করি, গতকাল যে চাঁদ দেখা গেছে সেটি সওয়ালের চাঁদ না, সেটি রমজানেরই চাঁদ।এ জন্যই আমরা ওই খবরটি গ্রহণ করিনি। তিনি গ্রহণ করেছেন বিধায় ঈদ করছেন– এটি নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করি না। ধর্মীয় স্বাধীনতা সবার আছে। আমরা এলাকাবাসী সোমবার ঈদের নামাজ পড়বো।’
জানা গেছে, সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা ৯৩ বছর ধরেই আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রায় ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। সাদ্রা ছাড়াও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো– হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বড়কুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া চাঁদপুরের পাশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাদ্রা দরবার শরিফ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মরহুম মাওলানা আবু ইছহাক ইংরেজি ১৯২৮ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ইসলামের সব ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচলন শুরু করেন। মাওলানা ইছহাকের মৃত্যুর পর থেকে তার ছয় ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।