বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা চাই, অতি জরুরি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে বর্তমান সরকার একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে। এই নির্বাচনে জনগণ যাকে ভালোবাসেন, যাদের ওপরে আস্থা রাখতে পারবেন, তাদেরই নির্বাচিত করবেন।’
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা জামায়াতের আয়োজনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত দেশের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে চায়। আর এ জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করি, আপনারা জামায়াতের সব কাজের সঙ্গে থাকবেন এবং সহযোগিতা করবেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরা জীবনের বদলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, যা দেশের জাতীয় বাজেটের পাঁচ গুণ। শুধুমাত্র রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে শেখ রেহানা ৫৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পাচার করেছে। দেশে যত মেগা প্রকল্প হয়েছে তত মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট করেছে। আর এসব অর্থ দিয়ে বেগমপাড়ার মতো জায়গায় পুঁজি খাটিয়েছে। তারা দেশ প্রেমিক হলে দেশের সম্পদ লুট করে পালিয়ে যেত না। দেশ প্রেমিকরা কখনও পালাতে পারে না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে মেধা ও অর্থশূন্য করা।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, বাড়িঘর অফিস লুট করে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশপ্রেমিক প্রতিটি দল ও সাধারণ মানুষের ওপরেও এমন নির্যাতন করেছে, যা নজিরবিহীন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, নিষিদ্ধ করেছে। দেশের হাজারো আলেম ওলামাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে জেলে নিয়ে গেছে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সব সেক্টরে আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনও বসে আছে। আবার নতুন সিন্ডিকেটও তাদের স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। তবে আমরা জামায়াতে ইসলামী নতুন-পুরান সিন্ডিকেট দেখতে চাই না। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে সিন্ডিকেট ধ্বংসে সরকারকে সাহায্য করতে চাই।’
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজাউদ্দিন জোয়ারদারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ খন্দকার এ কে এম আলী মুহসিন, আব্দুল মতিন প্রমুখ।
শনিবার ভোর থেকেই তীব্র শীত উপেক্ষা করে জেলা কর্মী সম্মেলনে অংশ নিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা থেকেই কলেজ মাঠে আসতে থাকে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনস্থল থেকে শহরের সর্বত্র মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। জামায়াতের স্বেচ্ছাসেবকদের কঠোর নজদারিতে শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। জনগণের সুবিধার্থে শহরের বিভিন্ন সড়কের প্রবেশ মুখ বন্ধ রাখা হয়। শহরের কেন্দীয় ঈদগাহ ময়দান, সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস, মীর মশাররফ হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রজেক্টরে বক্তব্য শোনার ও দেখার ব্যবস্থা রাখা হয়।