৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেন মো. রায়হান। ওইদিন বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন নোয়াখালীর এই বীর সন্তান। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) তার পরীক্ষার ফলাফল সবাই জানলেও নিজে জানতে পারলেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধা রায়হান।
মো. রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। তিনি রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। মঙ্গলবার পরীক্ষার ফল জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বিজয় মিছিলে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন রায়হান। এরপর ৬ আগস্ট দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডায় একটা বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটা মেসে থাকতেন।
রায়হানের বোন উর্মি আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই মেধাবী ছাত্র ছিল। তার আচার-আচরণও ভালো ছিল। বাবা-মা সব সময় তার জন্য কান্নাকাটি করেন। মঙ্গলবার পরীক্ষার ফলাফলের খবর শুনে বাবা-মা আরও বেশি কান্না করছেন। আমার ভাই বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।’
রায়হানের মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে নেই, এখন তার এই ফল দিয়ে কী হবে? সে পাস করেছে। তার আরও ভালো রেজাল্ট করার কথা। রায়হান মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা এখনও কান্নাকাটি করছেন। নিজেরা না খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছি৷ তাকে ঢাকায় পড়ালেখা করাইসি। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন বুলেটে শেষ হয়ে গেছে। আমি ওর হত্যাকারীদের বিচার দেখতে চাই। ওই বিচারের ফলাফলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’
গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এমএ কালাম বলেন, ‘আমাদের কলেজ থেকে এ বছর শহীদ রায়হানসহ ৩৯৪ জন বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তার মধ্যে ৩৮১ জন পাস করেছে। রায়হান জিপিএ ২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ফলাফল আরও ভালো হওয়ার কথা। কীভাবে এত খারাপ হলো তা আমাদের জানা নেই। তবে তার মৃত্যু আমাদের এখনও কাঁদায়। সরকার যেন তার পরিবারের সঙ্গে থাকে, সেই প্রত্যাশা করছি।’