Image default
বাংলাদেশ

আয়াতের ছোট্ট দেহটি ৬ টুকরো করে স্বজনদের যা বলেছিল ঘাতক

চট্টগ্রামে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতের (৫) বাড়িতে এখন শোকের মাতম। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবা এখন নিঃস্ব। ‘১০ দিন ধরে নিখোঁজ আয়াত আর বেঁচে নেই’, পিবিআই থেকে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে এমন তথ্য পেয়ে আহাজারিতে ভেঙে পড়েন মা-বাবাসহ স্বজনরা।

তাকে অপহরণের পর হত্যা করে আবির আলী নামে এক পোশাকশ্রমিক। এই ঘাতক রংপুর তারাগঞ্জ এলাকার আজমলী আলীর ছেলে। থাকে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকার ভাড়া বাসায়। এর আগে নিহত আয়াতের দাদার বাসায় ভাড়া থাকতো সে।

পুলিশ ও স্বজনরা জানান, আয়াতের নিখোঁজের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য পরিচিতজনদের মতো আবিরও আয়াতদের বাসায় এসেছিল। সে মা-বাবাকে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিয়েছিল। এমনকি স্বজনদের সঙ্গে আবির নিজেও আয়াতের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিল। যে কারণে সে সন্দেহের বাইরে ছিল। সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করছিল।

ঘাতক আবির স্বজনদের জানিয়েছিল, নিখোঁজের দিন তার সঙ্গে আয়াতের দেখা হয়েছিল। তাকে (আয়াতকে) আদর করে ছেড়ে দিয়েছিল। স্বজনরা এ কথা পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে সন্দেহ করে পিবিআই।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) আবিরকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ঘাতক আবির জানিয়েছে, ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম প্যাট্রোল, আদালত ও সিআইডি নিয়মিত দেখতো। এসব দেখে সে অপহরণের কৌশল রপ্ত করে। অপহরণের পর আয়াতকে আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।

নিহতের চাচা জোবায়ের হোসেন বাবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মা-বাবার একমাত্র সন্তান আয়াত। মা শাহেদা ইসলাম তামান্না আক্তার গৃহিণী ও বাবা সোহেল রানা পেশায় পান দোকানি। আয়াতের দাদার একটি কলোনি রয়েছে। সেখানে আবির আলী এক সময় ভাড়া থাকতো। গত কিছুদিন আগে সে বাসা ছেড়ে অন্যত্র নতুন বাসা ভাড়া নেয়। নিখোঁজের পর তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ওই দিন রাতে ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা।’

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণ করে তাদের সাবেক ভাড়াটিয়া আবির আলী। গত ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা নয়াহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার মসজিদের পাশ থেকে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় আয়াতকে অপহরণের চেষ্টা করে সে। অপহরণ করার সময় চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ আকমল আলী সড়কে অবস্থিত নিজ বাসায় নিয়ে ছয় টুকরো করে। এসব টুকরো দুটি বস্তায় করে পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে আয়াতকে না পেয়ে তার বাবা সোহেল রানা জিডি করেন। এ নিখোঁজ ডায়েরির ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। এই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সে পিবিআইকে এসব তথ্য দিয়েছে।’

এদিকে, ঘাতকের হেফাজত থেকে আয়াতের বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছে পিবিআই। এর মধ্যে আছে জুতা, জামা ও হত্যায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম। পিবিআইয়ের একটি টিম তার দেওয়া তথ্যে উদ্ধার হওয়া জুতা নিয়ে শুক্রবার সকালে স্বজনদের দেখায়। স্বজনরা এসব জুতা তাদের সন্তানের বলে শনাক্ত করে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আয়াতের বাবা সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ছোট নিষ্পাপ মেয়ে কী দোষ করেছে? তাকে কেন এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাকে নিঃস্ব করে দিলো। শয়তান আবির সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞেস করেছি, আমার মেয়েকে দেখেছে কি-না। সে বলেছে দেখেনি। এই শয়তান আমার মেয়েকে মেরে টুকরো করে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে আমার কোনও শত্রুতা নেই। আমার সঙ্গে টাকা পয়সার দেনা-পাওনাও নেই। এরপরও কেন আমার মেয়েকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে? আমি ওই শয়তানের ফাঁসি চাই।’

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অব্দুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজের ঘটনায় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল পরিবার। তাকে অপহরণের পর খুন করা হয়েছিল বলে পিবিআই জানিয়েছে। এখন এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে।’

পিবিআই ইন্সপেক্টর মনোজ দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুটি নিখোঁজের পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। এটি তদন্ত করে ইপিজেড থানা। পিবিআই এ জিডির ছায়া তদন্ত করে। ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করি। তাকে আটকের পর শিশু আয়াত নিখোঁজের রহস্য উদঘাটন হয়েছে।’

Related posts

দোকানে তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ ‘কাঁচা মরিচের গোল্লা’

News Desk

ব্যবসায়ীর বাড়িতে তাণ্ডব, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ

News Desk

১ লাখ ৬৯ হাজার পিস ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক

News Desk

Leave a Comment