আশাশুনিতে বিকল্প বাঁধে স্বস্তি, পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ
বাংলাদেশ

আশাশুনিতে বিকল্প বাঁধে স্বস্তি, পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকবলিত বিছটে পাউবোর বেড়িবাঁধের পাশে পাঁচ দিন পর রিং বাঁধ (বিকল্প বাঁধ) দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ভাটার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফলে এদিন সন্ধ্যা থেকে জোয়ারের সময় নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ বন্ধ আছে।

এর আগে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের তোড়ে গত সোমবার ঈদের দিন আনুলিয়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ইউনিয়নের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। ভেসে গেছে চার শতাধিক মৎস্যঘের। তলিয়ে গেছে ৫০০ বিঘা বোরো ধান। ঘরবাড়ি ছেড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। এখনও কোনও কোনও গ্রামে পানি রয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। সেখান থেকে আরও ২৫ কিলোমিটার গেলে আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। পরিষদের দক্ষিণে আরও তিন কিলোমিটার গেলে বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা। 

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত এলাকায় যত দূর চোখ যায়, সব পানিতে টইটম্বুর। ভাটায় গ্রামগুলো থেকে পানি নেমে নদীতে যাচ্ছে। বিছট গ্রামের উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন রিং বাঁধ দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। পাউবোর তত্ত্বাবধানে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজের তদারক করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন এবং সেনাবাহিনীর দুটি টিম গত চার দিন ধরে পরিশ্রম করে জিও টিউবের মধ্যে বালু ভরে সেখানে বিকল্প রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অবশেষে শুক্রবার তারা বাঁধটি দিতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। পানি প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভাঙনকবলিত মানুষের মধ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনে জোয়ারের পানিতে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি তলিয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এলাকায় কোনও আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় কয়েকশ পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। 

বিছট গ্রামের আবদুল সবুর গাজী (৭৩) তার বাড়ি দেখিয়ে বলেন, বাড়িঘর ছেড়ে দিয়েছেন। গত রবিবার রাতে ভাত খেয়েছিলেন। তারপর শুকনো খাবার খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। প্রতিবেশী লিয়াকত আলীর গাজীর দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বলেন, ওই বাড়িটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। একই গ্রামের শ্রমিক আবদুল করিম জানান, কোথাও শুকনো জায়গা নেই যে চুলা জ্বালিয়ে বাচ্চাকাচ্চাদের খাবার রান্না করে দেবেন। প্রতিবেশীদের একই অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুড়ি-চিড়া খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। 

আনুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস জানান, গত সোমবার থেকে তার ইউনিয়নের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ঈদে তার ইউনিয়নের মানুষ আনন্দ করতে পারেনি। ইতিমধ্যে বিছট, নয়াখালী, বাসুদেবপুর, বল্লভপুর, আনুলিয়া, চেঁচুয়া, কাকবাশিয়া, চেওটিয়া, কপসান্ডা ও পারবিছট গ্রাম পানিতে তলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাঁচ শতাধিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। চার শতাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। পাঁচ শতাধিক বিঘার বোরো ধানের খেত তলিয়ে গেছে। কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে। তবে রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে আজ। জিওটিউব দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে কাজ করা হয়েছে। তবে ন্যূনতম পাঁচটি বাল্কহেড দরকার ছিল, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড সরবরাহ করেছে মাত্র দুটি। এজন্য কাজ চলছে ধীরগতিতে। সবমিলিয়ে আজ সন্ধ্যায় লোকালয়ে পানি না আসায় স্বস্তি ফিরেছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন রাত-দিন পরিশ্রম করে জিওটিউবের মাধ্যমে রিং বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। আরও কিছু জিওটিউব সেখানে দেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিং বাঁধ নির্মাণের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। এরপর ধাপে ধাপে মূল বেড়িবাঁধ তৈরির কাজ শুরু করবো আমরা।’

 

Source link

Related posts

ঢাবির সব শিক্ষার্থী টিকা পেলে অক্টোবরে খুলবে হল

News Desk

মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নেয়ার সাজা বাড়ছে

News Desk

করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

News Desk

Leave a Comment