প্রতিবারের মতো এবারও নীলফামারীর সৈয়দপুরে পবিত্র আশুরা পালনে ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। অবাঙালি অধ্যুষিত সৈয়দপুরে দিবসটি বেশ ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এদিকে, ইমামবাড়ায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে সতর্ক অবস্থায়।
ইমামবাড়া কমিটি সূত্র জানায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তাজিয়া মিছিল বের হয় সৈয়দপুর শহরে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর মিছিল বের করা হয়নি। মিছিল হয়েছিল সীমিত আকারে। গতবার ৪৪টি ইমামবাড়ায় আশুরা পালিত হলেও এবার ৪২টিতে তাজিয়া বসানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সে লক্ষ্যে শনিবার প্রতিটি ইমামবাড়ায় ফাতেহা পাঠ ও পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে ধোয়া-মোছা আর রঙয়ের কাজ। পাশাপাশি ইমামবাড়ার জন্য চলছে তাজিয়া তৈরিরও কাজ। ইমাম হোসেনের প্রতীকী মাজারকে স্মরণ করে তৈরি করা হয় এসব তাজিয়া।
শহরের নতুন বাবুপাড়া ইমামবাড়া কমিটির সভাপতি সাকির হোসেন বাদল জানান, শুধু তাজিয়া মিছিল নয়, আশুরা উপলক্ষে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, তলোয়ার ও আগুনের বিভিন্ন ধরনের খেলা হয়। একই সঙ্গে মুখে উচ্চারিত হয় “ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন”। কেউবা অঝোর নয়নে কাঁদেন আর ইমাম হোসেনের মৃত্যুর স্মরণে মাতম গীত গাইতে থাকেন। প্রতিটি ইমামবাড়ায় তাজিয়া মিছিল, লাঠি খেলা, ইমাম হোসেনের ঘোড়ার প্রতিকৃতি হিসেবে মানত করে পাইক বাধা, ইমামবাড়ায় ফাতেহা পাঠ, নিশান চড়ানো হয়ে থাকে।
সৈয়দপুর শহরের রসুলপুর ইমামবাড়ার খলিফা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ১ মহরম কারবালার ঘটনার স্মরণে পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে পবিত্র আশুরা পালনের প্রস্ততি শুরু হয়। এখন প্রতিদিন ইমামবাড়া পরিষ্কার করা, দোয়াপাঠ ও শরবত বিতরণ চলছে। মহরমের ৭ তারিখে মানতকারীরা পাইক সাজবে। আগামী মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) মহরমের ৯ তারিখে প্রতিটি ইমামবাড়ায় বসানো হবে তাজিয়া। দশম দিনে প্রতীকী কারবালায় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে আনুষ্ঠানিকতা।
শহরের অফিসার্স কলোনি ইমামবাড়া কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ পাপ্পু বলেন, মহরমের ৭ তারিখের পর থেকে শহর জুড়েই দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। তারা দেখতে আসেন, দোয়া পড়েন, ভক্তি করেন। তবে বিগত বছরের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা হচ্ছে। আর এজন্য ইমামবাড়ায় অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে।
একই শহরের হাতিখানায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় প্রতীকী কারবালার আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন চিশতী বলেন, মহরমের ৭ তারিখে প্রতীকী কারবালা থেকে কিছু মাটি শহরের প্রতিটি ইমামবাড়ায় নিয়ে যান সেখানকার খলিফারা। বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী সে মাটি একটি পাত্রে করে তাজিয়ার নিচে সংরক্ষিত রাখা হয়। এরপর তাজিয়াকে কেন্দ্র করে চলে অন্যান্য রীতিনীতি পালন। বিধি নিষেধ থাকায় গতবছর তাজিয়া মিছিল নিষিদ্ধ ছিল। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাজিয়া মিছিলে আসার অনুমতি চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের (পুলিশ) কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সৈয়দপুর থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইমামবাড়া ও কারবালা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে আশুরা পালনের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইমামবাড়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হবে বলে জানান তিনি।