কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাখাওয়াত হোসেন খানকে ফেনীতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় তাকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় এ সংবর্ধনা দিয়েছেন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। এই নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সন্তান এম সাখাওয়াত হোসেন খান ২০২৩ সালে কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। তার আগে থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সিআইপি নির্বাচিত হওয়ায় তাকে এ সংবর্ধনা দিয়েছেন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী রাজনীতিতে সংবর্ধিত এম সাখাওয়াত হোসেনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণসহ নানা চিত্র উঠে আসে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা। বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাও ক্ষোভ ঝাড়ছেন এমন কর্মকাণ্ডে। এমন আয়োজনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে অনেকেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আয়োজকের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে মানিক আলী নামে ব্যক্তি লেখেন, স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টায় মেতে উঠেছে তারা। আওয়ামী দুঃশাসনকালে ফেনীকে কব্জায় রেখেছিল এরা। নতুন বাংলাদেশে এরা সুযোগ পায় কীভাবে?
নোমান হাবিব নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, সাখাওয়াত হোসেন ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থদাতা। কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কাতারে তার বাসায় ফেনী পৌর মেয়রসহ কয়েকজন কমিশনার, যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের অবস্থান রয়েছে। আর আমরা তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। কী জবাব দেবেন আগস্টের বীর শহীদদের? অর্থের কী ক্ষমতা?
জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রাসেল পাটোয়ারী এক পোস্টে মন্তব্য করেন, টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিছু টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পরিবারের লোককে সংবর্ধনা দিচ্ছে, এসবের ধিক্কার জানাই।’
আলাউদ্দিন নামে আরেকজন লেখেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের সাহস কীভাবে পায়? টাকার বিনিময়ে যদি আওয়ামী দোসররা সংবর্ধনা নেন আর ওই অনুষ্ঠানে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা যায় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আওয়ামী দোসরা প্রকাশ্যে খুনখারাবি করেও তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই।
আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এস আর মাসুদ রানা, ফেনী জেলা ব্যাংকার্স ফোরামের সভাপতি সামছুল করিম মজুমদার প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়ক মুহাইমিম তাজিম বলেন, এমন আয়োজন নিয়ে আমরা হতাশ। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। যারা আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে তারাও আওয়ামী লীগের দোসর। আয়োজকদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনীর এক সিনিয়র সাংবাদিক দাবি করেন, ফাউন্ডেশনটির কর্ণধার শাহাদাত হোসে সরকারি চাকরিজীবী হয়েও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। জেলায় আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন ষড়যন্ত্রের অংশ এটি। তিনি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে অতিথি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফাউন্ডেশনটির কর্ণধার সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন আমাকে পাঁচ মিনিটের জন্য ডেকে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়া মাত্রই আমি মুহূর্তেই হতভম্ব হয়ে পড়ি। আমি অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে যাওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত হন। ওই সময়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া সংবর্ধিত এ ব্যক্তি ২০১৭ সালে চেক জালিয়াতির মামলায়ও কারাগারে ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি লজ্জিত। যারা এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এটির দায় তাদের নিতে হবে।
আওয়ামী নেতাকে সংবর্ধনার আয়োজনের বিষয়ে আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন এর কর্ণধার শাহাদাত হোসেন জানান, সাখাওয়াত তো কাউকে খুন করেনি। প্রবাসী মানুষ, জেলার উপকার করবে তাই সংবর্ধনার আয়োজন করেছি। আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা জেলার তেমন কোনও সমস্যার কারণ নয় বলেও দাবি করেন।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ফেনীতে আমি নতুন, কাউকে তেমন চিনি না। আয়োজক সাংবাদিক শাহাদাতের আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত হয়েছি।