ইটভাটার ধোঁয়া-গ্যাসে পুড়েছে ৫০ বিঘা জমির ধান
বাংলাদেশ

ইটভাটার ধোঁয়া-গ্যাসে পুড়েছে ৫০ বিঘা জমির ধান

গাইবান্ধার সাঘাটায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মেসার্স কিএমকে-২ ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে ৫০ বিঘা জমির কাঁচা-পাকা বোরো ধান পুড়ে গেছে। এতে স্বপ্নের ফসল হারিয়ে কপাল পুড়েছে কৃষকদের।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, অনুমোদন ছাড়াই গত ১০ বছর ধরে চলছে কিএমকে-২ ব্রিকস। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ভাটামালিক প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খোলার সাহস পাননি কৃষকরা। 

ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। 

সাঘাটা উপজেলার টেপাপদুমশহর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কষ্টের সংসারে ধারদেনা করে দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান করেছি। অনেক স্বপ্ন ছিল। ভেবেছিলাম সংসারে সুদিন আসবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পুড়ে গেছে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে। ধান পাকার আগেই শীষ পুড়ে আমার দুই বিষা জমির সব ধান বিবর্ণ হয়ে গেছে।’

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমরা কি খাবো? কে দেখবে আমাদের? গত ১০ বছরে এই ইটভাটার কারণে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের ক্ষতি তার কাছে কিছুই মনে হয় না।’ 

শুধু সিরাজুল ইসলাম নন, তার মতো টেপাপদুমশহর গ্রামের অনেক কৃষকের ধানক্ষেত পুড়ে গেছে। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের অন্তত ৫০-৬০ বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান পুড়ে নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই এলাকার কৃষক ময়নুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মহি বেগমসহ অন্তত শতাধিক কৃষক।

ওই গ্রামের কৃষক হাসিবুর ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে আমার পাঁচ বিঘা জমির বোরো ধান সব পুড়ে গেছে। ভাটার গ্যাসে আশপাশের বসতবাড়ির আম ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছের ফল ও পাতা পুড়ে গেছে। এতে আমরা সর্বস্বান্ত হয়েছি। ইটভাটাটি বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘ইটভাটার কারণে গ্রামের ৫০-৬০ বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান পুড়ে গেছে। কিন্তু ভাটার মালিক বিষয়টি নজরে না নিয়ে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নামে টালবাহনা করছেন। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। এই ইটভাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।’

অনুমোদন ছাড়াই গত ১০ বছর ধরে চলছে কিএমকে-২ ব্রিকস, পুড়ে গেছে জমির সব ধান

কাশেম উদ্দিন বলেন, ‘এই ইটভাটা স্থানীয় পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রফিকুল ইসলাম দুদুর জমিতে অবস্থিত। কৃষিজমিতে ইটভাটা করার নিয়ম না থাকলেও মেম্বার প্রভাব খাটিয়ে গত ১০ বছরে কয়েক গ্রামের কৃষককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না।’

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম দুদু বলেন, ‘ইটভাটাটি আমার জায়গায় গত ১০ বছর থেকে চলছে। আমি জায়গা ভাড়া দিয়েছি। ভাটার মালিক গাইবান্ধা শহরের মো. মনির হোসেন মনির। ইটভাটার কারণে ধানের যে ক্ষতি হয়েছে মালিক ও কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে মেসার্স কিএমকে-২ ব্রিকস’র মালিক মনির হোসেন মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে ইটভাটার ম্যানেজার বিদ্যুত মিয়া বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। আপনারা ভাটার মালিকের সঙ্গে কথা বলেন।’

ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ভাটামালিক প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খোলার সাহস পাননি কৃষকরা

পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি কৃষকরা আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণসহ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেত পরিদর্শন করেছি। ইটাভাটার কারণে কি পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে তার জরিপ চলছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ওই ইটভাটার অনুমোদন নেই। এটি বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের পরামর্শে ইটভাটাটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮ কৃষকের তালিকা পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

Source link

Related posts

শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এখন পর্যন্ত ৭ জনের প্রাণহানি

News Desk

গ্রিন হাউস রেস্তোরাঁসহ দুই প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

News Desk

সুবর্ণচরে আগুনে পুড়েছে ১৯ দোকান, ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

News Desk

Leave a Comment