ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটে আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ৭৯ আসনের বিপরীতে ভর্তি সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে নয় হাজার নয়শত চব্বিশ শিক্ষার্থীকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মীর মশাররফ হোসেন ভবনের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অভিযোগ ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের।
এ দিকে, এক হাজার চারশত ছাব্বিশ থেকে শুরু হয় ভর্তি সাক্ষাৎকার চলে চার হাজার পাঁচশত পর্যন্ত। এর মধ্যে দুইশত ছেচল্লিশ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউনিট সমন্বয়কারী আর বাকি উপস্থিতিদের শুধুমাত্র গণ সাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন। ভর্তিচ্ছুদের উপস্থিতি আশানুরূপের চেয়ে বেশি হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলায় আইন অনুষদের ডিন অফিসে নেওয়া হয় ভর্তি সাক্ষাৎকারটি।
এ দিকে, গত (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শুধুমাত্র আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে মেধাক্রম ১৪২৬ থেকে ১১৩৫০ পর্যন্ত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে। এর আগে গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের তৃতীয় মেধাতালিকার ভর্তি কার্যক্রম শেষেও ১২৭০ আসন খালি থাকে। পরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এ, বি ও সি ইউনিটে গত ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষাৎকার নিয়ে খালি আসন পূরণ করা হয়। তবে শুধুমাত্র আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ৭৯টি আসন পূরণ করার জন্য নয় হাজার নয়শত চব্বিশ জন শিক্ষার্থীকে আজ শনিবার ডাকা হয়।
মাত্র ৭৯ আসনের জন্য কেন এতো শিক্ষার্থী ডাকা হলো অভিযোগ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। রংপুর থেকে আগত তানভীর নামের এক ভর্তিচ্ছু বলেন, ৭৯ সিটের বিপরীতে এতো শিক্ষার্থী ডাকার কারণ আমাদের কাছে অজানা, ক্যাম্পাসে এসে গুঞ্জন শুনতে পেলাম শুধুমাত্র মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদি এমন হয় তাহলে আমাদের সময় অপচয়, অর্থ ব্যয় আর চরম ভোগান্তি ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বরিশাল থেকে আগত নজরুল ইসলাম নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়েকে ভর্তির জন্য খুব আশা করে এই ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছি কিন্তু এখানকার সিস্টেম দেখে সন্তুষ্ট প্রকাশ করতে পারলাম না। তিনি আরও জানান, এখানে এসে শুনতে পেলাম শুধুমাত্র মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এরকম কথা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশে কোথাও উল্লেখ করা নেই। যদি এরকম হয় তাহলে ঢালাওভাবে এভাবে কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থী ডাকার কোন মানে হয়না।
এ বিষয়ে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, আমরা তো এতো শিক্ষার্থী ডাকিনি। যারা আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পড়তে ইচ্ছুক এমন ১৪২৬-১১৩৫০ মেধাক্রম পর্যন্ত সাক্ষাৎকারে ডেকেছিলাম। এখন সেখানে কেমন শিক্ষার্থী উপস্থিত হবে সেটা তো আমরা আগে থেকে জানি না। ১০ হাজারের মধ্যে উপস্থিতি ৫০ জনও তো হতে পারতো।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞপ্তিতে এমন কোনো নির্দেশনা নেই এবং আমিও কোথাও দেখিনি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে সাক্ষাৎকার নিয়ে আগামীকালের মধ্যে ভর্তি হওয়া তো কোনো ভাবেই সম্ভব না। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করবো কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, টেকনিক্যাল কমিটিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছিল যেটি হলো এমন; এখানে সাধারণদের জন্য না। শুধু যারা আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পড়তে চাই এমন শিক্ষার্থীরা আসবে এবং মাইগ্রেশনের কোনো সুযোগ থাকবে না। পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী টেকনিক্যাল কমিটি ভাবছে যেহেতু আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে তেমন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাচ্ছে না সুতরাং তারা সাক্ষাৎকারের জন্য একটু বেশি ডেকেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে অনেকে চলে এসেছেন। এতে করে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে যায় হোক না কেনো আমরা ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে চাই।