ইলিশের বাড়িখ্যাত চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের খাদ্যের উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষা এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (নদী কেন্দ্র)।
বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশিদ এ চিঠি দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীতে ড্রেজারের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ নদী থেকে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ডুবোচর খননের নামে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এ কাজটি দীর্ঘ দিন করে যাচ্ছে। ফলে ইলিশের বৃহত্তম বিচরণ ক্ষেত্র ও অভয়াশ্রম (ষাটনল হতে চর আলেকজান্ডার) নষ্টসহ নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, মেঘনা নদীতে অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে প্রধান প্রজনন মৌসুমে চাঁদপুর অংশে ইলিশের প্রজনন ও বিচরণ সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে শত শত ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাতে, নির্গত পোড়া মবিল ও তেলের কারণে মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য নদীর প্লাংটন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এছাড়া বালু উত্তোলনে নদী দূষণসহ নদীগর্ভের গঠন প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার ফলে বাসস্থানের বাস্তুতন্ত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি ইলিশসহ অন্যান্য মাছের খাদ্যের উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের বিচরণ ও প্রজনন পাল্টে যাওয়াসহ ইলিশের উৎপাদন মেঘনা নদীতে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয় মাছ ইলিশকে রক্ষা এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে প্রধান প্রজনন ও বিচরণ মৌসুমে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধসহ ড্রেজারগুলো স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জাটকা ও ইলিশের স্বার্থে আমরা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত দুই মাস বালু উত্তোলন বন্ধ থাকবে। যেহেতু চাঁদপুর ইলিশের অভয়ারণ্য- তাই এই প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্রটি যেন অভয়ারণ্য হিসেবেই থাকে, সেজন্য ড্রেজিং বন্ধের বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে খুব দ্রুত চিঠি পাঠাবো। একই সঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং কেবিনেট ডিভিশনকেও চিঠি লিখবো।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর নদী অঞ্চল থেকে গত কয়েক বছর ধরেই অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এর ফলে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদীভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।