পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে টানা আট দিন আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। গত বছর একই সময়ে আমদানি বন্ধ থাকার সুযোগে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকায় উঠেছিল। এবারও আমদানি বন্ধের খবরে দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনে আরও বাড়তে পারে এবং ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তবে আমদানি বন্ধের প্রভাব আলু ও পেঁয়াজের ওপর পড়বে না। ঈদের বাজারে এই দুটি পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে অন্যান্য দিনের মতো পেঁয়াজ, আলু ও কাঁচা মরিচ আমদানি অব্যাহত আছে। ১৪ জুন পর্যন্ত আমদানি হবে। গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৯৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ, ৩০৩ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ, ২১০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১১ ট্রাকে ১০১ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ, দুই ট্রাকে ৩৮ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। তবে এদিন কোনও পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এর আগের দিন বুধবার ১৭৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
বন্দরে শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার কাঁচা মরিচের কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলুর কেজি সোমবার ও মঙ্গলবার ৪১ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আমদানিকৃতটা বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। তবে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ বাজারে না থাকায় দেশিটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আমদানিকৃত আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। তবে দেশি কার্ডিনাল আলু ৫০ আর গুটি জাতেরটা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরানবাজার ও শ্যামবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় দাম পড়ছে ১৮০-২০০ টাকা। আলুর কেজি পাইকারিতে ৫৫ আর খুচরায় ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ পাইকারিতে ৭৫ আর খুচরায় ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের কাঁচা মরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তীব্র গরমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচা মরিচের গাছ ও ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় দাম বাড়তে শুরু করে। এ অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। অনুমতি পেয়ে গত ২৩ মে থেকে আমদানি শুরু হয়। ফলে বাজারে দাম কমে যায়। কিছুদিন ধরেই ১০০ টাকার মধ্যেই ছিল। কিন্তু আগামী ১৪ জুন থেকে আট দিন হিলি দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকবে। একইভাবে দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়েও বন্ধ থাকবে। এ খবরে বাজারে পণ্যটির চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। আড়তদাররা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাঁচা মরিচের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে সররবাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানি বাড়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যে মরিচ এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে কেনাসহ সবকিছু মিলিয়ে ৮০-৮৫ টাকার মতো দাম পড়তো। আমরা ৯০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন কেনা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচসহ দাম পড়ছে ১১৫ টাকার মতো। আমরা ১২০ টাকায় বিক্রি করছি। বাজারে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু অনেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন।’
আট দিন আমদানি বন্ধ থাকলে বাজারে কতটা প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই আমদানিকারক বলেন, ‘এই সময়ে বাজারে সরবরাহ কমবে। দামও বাড়বে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় এটি বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। বর্তমানে বাজারে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আমদানি বন্ধের পরদিন থেকে দাম আরও বাড়তে পারে। যা সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। আমদানি শুরু হলে দাম আবার কমে যাবে।’
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম আলু ও পেঁয়াজের বড় আমদানিকারক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলু-পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত আছে। তবে বাড়তি দামের কারণে পড়তা না পড়ায় বাজারে তেমন একটা চাহিদা না থাকায় পণ্য দুটির আমদানি তেমন একটা হচ্ছে না। বন্দর দিয়ে আলু সীমিত পরিমাণে আসছে। অর্থাৎ দিনে এক থেকে দুই ট্রাক আমদানি হচ্ছে।’
ঈদুল আজহা উপলক্ষে আট দিন আমদানি বন্ধ থাকলেও দেশের বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। তারপরেও দাম স্বাভাবিক ছিল। এর মূল কারণ হলো দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। দামে পড়তা না পড়ায় কার্ডিনাল আলু আমদানি বন্ধ আছে। শুধু সাদা আলু আমদানি হচ্ছে। সেগুলোর দাম পড়ছে ৪০ টাকা। আমরা সেগুলো ৪২-৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’
ভারত সরকার প্রতি টন পেঁয়াজে ন্যূনতম রফতানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫৫০ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে এই আমদানিকারক বলেন, ‘গত ৪ মে পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রফতানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ভারত। ডলারের বিনিময় মূল্য ১১০-১২০ টাকা হিসাবে আমদানি মূল্য পড়ছে প্রতি কেজি ৬৫-৬৮ টাকা পর্যন্ত। এই দামের সঙ্গে যোগ হচ্ছে রফতানি শুল্ক, কাস্টমস শুল্ক, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। অনেকে আমদানি করে ওই দামের চেয়ে কমে বিক্রি করেছেন।ফলে লোকসানের আশঙ্কায় ২১ দিন আমদানি বন্ধ ছিল। ৪ জুন থেকে আবারও আমদানি শুরু হয়। এরপরও ৬৯-৭০ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা যাচ্ছে না। কারণ দেশি পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।’
কোরবানির ঈদ ঘিরে বাড়তি চাহিদা এবং আট দিন বন্দর বন্ধ থাকার কথা মাথায় রেখে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা জানিয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর ফলে বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কেজিতে দুই টাকা করে কমেছে। তবে আট দিন বন্ধের প্রভাব পেঁয়াজের ওপর পড়বে না।’
বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৪ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত আট দিন হিলি দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছেন আমদানি-রফতানিকারকরা। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকলেও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত বন্দরের ভেতরের সব কার্যক্রম চালু থাকবে। এ সময়ে আমদানিকারকরা কাস্টমস প্রক্রিয়া শেষে বন্দরে থাকা পণ্য খালাস করে নিতে পারবেন।’
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আশরাফুল বলেন, ‘পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।’