ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামের বিনোদনকেন্দ্রগুলো
বাংলাদেশ

ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামের বিনোদনকেন্দ্রগুলো

ঈদুল ফিতরকে ঘিরে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামের বিনোদনকেন্দ্রগুলো। দর্শনার্থী টানতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এখন ধোয়ামোছার পাশাপাশি বিভিন্ন রাইডে রং করে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। এবারের ঈদে খোলা থাকবে জেলার সবকটি বিনোদনকেন্দ্র।

তবে এবার চট্টগ্রামে চারটি বিনোদনকেন্দ্র কমেছে। সেগুলো হলো- নগরের আগ্রাবাদে অবস্থিত কর্ণফুলী শিশু পার্ক, ষোলশহরে অবস্থিত বিপ্লব উদ্যান, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত মিনি বাংলাদেশ খ্যাত স্বাধীনতা কমপ্লেক্স এবং ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া কাজির দেউড়ি শিশুপার্ক। এগুলো এবার বন্ধ থাকবে।

চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় বিনোদনকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত পতেঙ্গা বিচ। গত ঈদে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে দৈনিক লাখো দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছিল। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাখো দর্শনার্থী আসতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পতেঙ্গায় অবস্থিত একমাত্র কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল। এই টানেল দেখতেও বাড়ছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। তাদের নিরাপত্তায় পতেঙ্গা এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এ প্রসঙ্গে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদ ঘিরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় দৈনিক কয়েক হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। ঈদে তা বেড়ে দৈনিক ৮০ হাজার থেকে লাখ ছাড়িয়ে যায়। তাদের সমাগমের বিষয়টি মাথায় রেখে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছি আমরা। এর মধ্যে থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাদা পোশাকে গোয়েন্দা টিম, সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে টহল টিম, সেই সঙ্গে থাকছে কুইক রেসপন্স টিম। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে নজরদারি করা হবে। ইভটিজিংসহ যেকোনো অপরাধের খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঈদ ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে নগরের ফয়’স লেক এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পরিচালিত এই চিড়িয়াখানায় ৬৮ প্রজাতির ৫২০টি পশুপাখি রয়েছে। সেখানেও কয়েক হাজার পর্যটক যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

চিড়িয়াখানার চিকিৎসক ও ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদে দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। ঈদের পাঁচ দিনে ৬০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে আশা করছি। দৈনিক ১২ হাজার করে আসতে পারে। দিনে স্বাভাবিক সময়ে চিড়িয়াখানায় দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার দর্শনার্থী আসেন।’ 

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পুরো চিড়িয়াখানাজুড়ে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা উল্লেখ করে ডা. শাহাদাত আরও বলেন, ‘শিশুদের জন্য চিড়িয়াখানায় পৃথক কিডস জোন আছে। সেখানে দোলনাসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে।’

একইভাবে নগরের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র পাহাড়তলীতে রেলওয়ের জলাশয় ফয়’স লেকে গড়ে তোলা এমিউজমেন্ট পার্ক এবং সি ওয়ার্ল্ডকে সাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন রাইডের সাজসজ্জার কাজ চলছে।

পার্ক পরিচালনাকারী কোম্পানি কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার ঈদে দর্শনার্থীদের কাছে এমিউজমেন্ট পার্ক ও সি ওয়ার্ল্ডকে আকর্ষণীয় করতে প্রস্তুতি চলছে। ঈদে দৈনিক পাঁচ-ছয় হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করবে বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

ঈদে দর্শনার্থীদের এবার নজর কাড়বে জেলা প্রশাসক পরিচালিত ডিসি পার্ক। ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এলাকায় পার্কটির অবস্থান। ১৯৪ একর খাস জমি দখলমুক্ত করে পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। শোভা পাচ্ছে শতাধিক রকমের ফুল। এটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখন ধোয়ামোছার পাশাপাশি বিভিন্ন রাইডে রং করে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে

পাশাপাশি নগরের বিপ্লব উদ্যানের পার্কটির আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এখানে বিনোদনের স্থান নেই। অপরদিকে ৫ আগস্টর পর ইজারাদার কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে আগ্রাবাদে অবস্থিত কর্ণফুলী শিশুপার্ক ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত মিনি বাংলাদেশ খ্যাত স্বাধীনতা কমপ্লেক্স।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কর্ণফুলী শিশুপার্ক ও স্বাধীনতা কমপ্লেক্স খুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিপ্লব উদ্যানের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হতে আরও ছয় মাস কিংবা এক বছর লাগতে পারে। এরপর এটি খুলে দেওয়া হবে।’ 

এ ছাড়া ঈদ ঘিরে প্রস্তুত রয়েছে নগরের পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত প্রজাপতি পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয় মিত্র ঘাট, আগ্রাবাদ জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর এবং হালিশহর সাগর পাড়। নগরের বাইরেও জেলার ১৫টি উপজেলায় প্রস্তুত একাধিক বিনোদনকেন্দ্র। যার মধ্যে রয়েছে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সাগরপাড়, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্রসৈকত, রাউজানে মহামুনি মন্দির, অনিরুদ্ধ বড়ুয়া অনি শিশুপার্ক, বেতাগী কর্ণফুলী নদীর পাড়, রাউজান রাবার বাগান ও ফটিকছড়ি চা বাগান।

Source link

Related posts

ইউএনওকে হত্যাচেষ্টা: সাক্ষী দিতে ২ তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব 

News Desk

সংরক্ষিত বনের বালু কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, হুমকির মুখে সবুজবেষ্টনী

News Desk

বান্দরবান হানাদারমুক্ত দিবস আজ

News Desk

Leave a Comment