ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ। স্বাভাবিক সময়ে এই মহাসড়কে ব্যস্ততা দেশের অন্য মহাসড়ক থেকে কয়েকগুণ বেশি। আর ঈদ উপলক্ষে চাপ আরও বাড়ে। তাই এই মহাসড়কের যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবারও নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।
জানা গেছে, এই মহাসড়কে যুক্ত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ প্রায় ১০ জেলা। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে কয়েক লাখ মানুষ ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরবে। এই ঈদযাত্রায় যেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয় এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেকারণেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
মহাসড়কের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান
পরিবহন চালক, মালিক ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু এলাকায় আগে যানজট সৃষ্টি হতো। কিন্তু সড়কের উন্নয়ন কাজ ও পুলিশের তৎপরতায় তা কমেছে। এরপরও সব বিষয়ে বিবেচনা করে এই মহাসড়কের অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে, বলদাখাল বাসস্ট্যান্ড, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, নিমসার বাজার ও ইউটার্ন, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), আলেখারচর বিশ্বরোড, বিসিক মোড়, চৌদ্দগ্রাম বাজার, লালপোল, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফৌজদারহাট ইউটার্ন, সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড, বড় দারোগারহাট স্কেল।
এসব স্থানে অতিরিক্ত টহল ও বাড়তি নজরদারিতে রাখবে হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়াও কম গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি স্থান হিসেবে শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড, আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, কোটবাড়ি ইউটার্ন, জাগুরঝুলি কাটা, নুরজাহান হোটেলের সামনের ইউটার্ন, সদর দক্ষিণ থানার সামনের ইউটার্ন, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, বারবকুন্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ফুটলিং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।
পরিবহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে এই মহাসড়কে তেমন কোনও বড় যানজট হয়নি। যদি এসব স্থানকে গুরুত্বসহকারে দেখা হয় এবং সার্বক্ষণিক নজরে রাখা হয় তাহলে আর যানজটের সম্ভাবনা নেই।
যে কারণে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে
হাইওয়ে পুলিশ, চালক মালিক ও স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের যানজটের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে মহাসড়কের পাশে অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা নির্মাণ, মহাসড়কে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, অবৈধ পার্কিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ সড়কের কারণে, পণ্যবাহী গাড়িতে ওভারলোডের কারণে ধীরগতি, পথচারীদের অসচেতনতা, টোলপ্লাজায় ধীর গতিতে টোল আদায়, দুর্ঘটনার কারণে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে বিকল হয়ে যাওয়া, সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাড়ি চালানোর ফলে যানজট লেগে থাকে।
হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগ
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৩১ কিলোমিটার সড়ককে ভোগান্তিমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম। সড়কজুড়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশ। কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে সেক্টর থাকবে দুটি ও সাব সেক্টর ২১টি, মোবাইল ডিউটি থাকবে ৩৪টি, পিকেট ডিউটি ১৫টি, কুইক রেসপন্স টিম মোটরসাইকেলযোগে থাকবে ১৫টি, পিকআপ যোগে ১৫টি, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ একটি, রেকার ডিউটি সরকারি পাঁচটি ও বেসরকারি ছয়টিসহ সর্বমোট ১১টি, অ্যাম্বুলেন্স ডিউটি দুটি, কন্ট্রোলরুম একটি, অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম বা ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ৩৫টি।
এভাবে সব পদের সর্বমোট ৬৮০ জন পুলিশ ও ৩৫০ জন কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য সার্বক্ষণিক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মহড়া দেবে। একইসঙ্গে জেলা পুলিশ মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী থানা এলাকায় যেখানে সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়ক জনপদের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা কাজ করছেন। যানজটমুক্ত, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অতিরিক্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইরোধে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা।
সড়ক ও জনপদের উদ্যোগ
সড়ক ও জনপদ অধিদফতর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহন নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বুধবারও একটা মতবিনিময় ছিল। বলেছি কোথাও এখন উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ হবে না। চান্দিনা ও গৌরীপুরে আমাদের নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। সেগুলোর মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। কোথাও সড়কে কোনও সমস্যার সৃষ্টি হলে তা সমাধানে আমাদের দুটি টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠে রেখেছি। তারা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
পরিবহন মালিকদের উদ্যোগ
জনসেবার বাস মালিকরা সব ব্যবস্থা করবে উল্লেখ করে কুমিল্লা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ও সড়ক বিভাগ আমাদের সঙ্গে বসেছে। তারা আমাদের বলেছে যেন ঈদ মৌসুমে কোনও ফিটনেসবিহীন গাড়ি না বের করি, গাড়ি স্ট্যান্ড ছাড়া যেন না দাঁড়ায়, যত্রতত্র যাত্রী না ওঠানামা করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা বলেছি সড়কে চাঁদাবাজি না হলে এবং পুলিশ সহযোগিতা করলে বাস শ্রমিকরাও অনিয়ম করবে না। অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
কমিউনিটি পুলিশিং কুমিল্লা রিজিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী শারমিন আউয়াল পারভেজ বাপ্পি বলেন, যেসব স্থান যানজটপ্রবণ সেসব স্থানে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। যদি মালিক, শ্রমিক, হাইওয়ে পুলিশ ও যাত্রীরা সমন্বয় করে এবারের ঈদ যাত্রা পূর্বের তুলনায় আরও বেশি সুন্দর ও নিরাপদ হবে।
কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে কোথাও হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করলে তা প্রমাণিত হলে তাকে ক্লোজ (প্রত্যাহার) করা হবে। কোনও প্রকার যানবাহন দাঁড় করিয়ে হয়রানি যাবে না। মহাসড়ক এলাকায় বাজার ও বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি আটক হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- কোনও সুপারিশ শোনা হবে না। কুমিল্লা অংশে দাউকান্দিসহ একাধিক স্থানে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোত কিছুটা যানজট রয়েছে। তবে এবার ঈদে নির্বিঘ্নে সবাই বাড়ি গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। কোনও দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা টোলপ্লাজায় যদি যানবাহনের জটলা তৈরি হয়, সেজন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নানান ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর টোলপ্লাজায় সাধারণ গাড়ির চাপ বাড়লেই যানজট তৈরি হয়।