ঈদ যাত্রায় ফেরি ও লঞ্চঘাটে দুর্ভোগের শঙ্কা
বাংলাদেশ

ঈদ যাত্রায় ফেরি ও লঞ্চঘাটে দুর্ভোগের শঙ্কা

ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষকে এবারও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বর্ষা মৌসুম থেকে টানা ভোগান্তির শিকার এ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা। তবে এবারের ঈদে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানেজার নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের প্রবেশপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ অনেক গুরুত্ব বহন করে। এই নৌপথের লঞ্চঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করেন। তবে লঞ্চঘাটটি গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় এবার ঈদ যাত্রায় ভোগন্তি বাড়বে। 

‘এবারের বর্ষায় ফেরি ও লঞ্চঘাট টিকবেতো?’

অনুসন্ধানে জানা, গত বর্ষায় দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের অর্ধেক অংশ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। লঞ্চে ওঠানামার একমাত্র কাঠের ব্রিজটি বিকল হয়ে পরে। বর্ষা মৌসুমে জরুরিভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কোনও রকমে লঞ্চ ঘাটটি সচল রাখে। ঘাটের দুটি কাঠের ব্রিজ দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। জোড়াতালি দিয়ে ঘাট ব্যবহারকারী যাত্রীরা নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি মেনেই চলাচল করছে সারা বছর। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাট থেকে বছরে দুই কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হলেও বিকল ঘাটটি অদৃশ্য কারণে মেরামত করছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট ইজারাদার বদিরুজ্জামান টোকন বলেন, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট অনেক টাকা খরচ করে এবার ইজারা নিয়েছি। কিন্ত লঞ্চঘাটের রাস্তা খুবই খারাপ থাকায় যাত্রী অনেক কম চলাচল করে। অধিকাংশ যাত্রী বিকল্প পথে ফেরিতে নদী পারাপার হয়। এই ঘাট দিয়ে যাত্রী কম চলচল করার কারণে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।

৪ কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে নিয়মিত দীর্ঘ যানজট

অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বর্তমান ১১টি রোরো (বড়), ছয়টি ইউটিলিটি (ছোট), টানা (ডাম্প) ফেরি দুটি এবং কে-টাইপ (মাঝারি) একটিসহ মোট ২০টি ফেরি চলাচল করে। ২০টি ফেরি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে যাত্রীবাহী বাস ৬৩৮, পণ্যবাহী ট্রাক ১২৫৮টি  এবং ১৮৭২টি ছোটগাড়িসহ মোট তিন হাজার ৭৬৮ যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। সে হিসেবে পাটুরিয়া থেকেও দৌলতদিয়া ঘাটে নদী পার হয়ে আসে একই সংখ্যার বিভিন্ন যানবাহন। ঈদের সময় এ চাপ আরও বাড়বে। 

এছাড়া দৌলতদিয়ায় মোট সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ১ ও ২নম্বর ঘাট উদ্বোধনের পর প্রায় পাঁচ বছর আগে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়েছে। ৬ নম্বর ঘাটটি গত বর্ষার পর থেকে বিকল রয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট কোনও রকমে সচল রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। তবে পদ্মা নদীর পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় ফেরি থেকে ভারী যানবাহন ওঠা-নামায় সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া মাঝে মধ্যেই সংযোগ সড়কে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে পরে থাকে। বিকল যানবাহনগুলো বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব রেকার দিয়ে সরানো হয়। যানবাহন চালককে রেকার বাবদ প্রতি ঘণ্টায় ৩৪শ’ টাকা গুণতে হয়।

এসব নানা সমস্যায় ঈদের আগে লঞ্চঘাট দিয়ে যাত্রী এবং ফেরিতে যানবাহন পারাপার নিয়ে ভোগান্তি বাড়বে বলেই শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। 

পাটুরিয়া-আরিচা নদী বন্দরের পোর্ট অফিসার শাহ আলম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠানামা করতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘাটটি দ্রুত মেরামত করার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে চিঠি দিয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত মেরামতের কাজ করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম দৌলতদিয়া ঘাটের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, পদ্মা নদীর পানি বাড়লে অবশ্যই ঘাটটি মেরামত করা হবে। পানি নিচুতে চলে যাওয়ায় কাজ করা যাবে না। পানি না বাড়া পর্যন্ত ঘাটটি এভাবেই থাকবে। যাত্রীদের সাময়িক দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হবে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা বন্দরের উপসহকারী পরিচালক খালেদ নেওয়াজ জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের পদ্মা ও যমুনা নদীর পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌযানগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। যে কারণে প্রতিনিয়ত উভয় ঘাটে কিছু যানবাহনকে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। তবে নদীর পানি বাড়লে সমস্যাগুলো থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

Source link

Related posts

চট্টগ্রামে হরতালের সমর্থনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ

News Desk

সিলেটে ‘মধুচক্রের’সন্ধানে পুলিশ

News Desk

দেশে প্রথম অনুমোদন পেল এক ডোজের করোনা টিকা

News Desk

Leave a Comment