চার লেনের কাজ শেষ না হওয়ায় ঈদুল আজহায়ও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। বিগত বছরগুলোয় এই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কে এবারও ভোগান্তির শঙ্কা করছেন ঘরমুখো মানুষ। তবে গত ঈদুল ফিতরের যাত্রায় যানজট অনেকটাই কম ছিল এ সড়কে। এই ঈদে যানজট নিরসনে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন।
বর্তমানে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের সুবিধা আছে। এই যানবাহনগুলো টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় এসে দুই লেনে প্রবেশ করছে। এরপর এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের এই দুই লেন ধরে যানবাহনগুলো উত্তরবঙ্গের দিকে যায়। দুই লেনে প্রবেশ করার পর যানবাহনের গতি একেবারেই কমে যাচ্ছে। ফিটনেসবিহীন ও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অসংখ্য গাড়ি। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো সরাতে দেরি হওয়ায় বেশির ভাগ সময়ই যানজট লেগে যায়। আবার বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি থাকার কারণেও জটের সৃষ্টি হয়ে থাকে এই সড়কে।
এ মহাসড়কে উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। ফলে যাতায়াতে মহাসড়কটির গুরুত্ব রয়েছে। এজন্য ঈদের আগে এ মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে ২৩টি জেলার ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
বঙ্গবন্ধু সেতু সূত্রে জানা যায়, গত ঈদযাত্রায় ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল ও ৮৩টি দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে ঈদযাত্রার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে টোলপ্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি রয়েছে। এছাড়াও ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে থ্রি-হুইলার দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে।
স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদকে কেন্দ্র করে একদিনে ৫৫ হাজারের বেশি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়। স্বাভাবিক সময়ে সেতুর উভয় প্রান্তে ১২টি বুথে টোল আদায় করা হয়, তবে ঈদের সময় তা বাড়িয়ে ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হয়। এছাড়াও সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কালিহাতীর এলেঙ্গা থেকে নলকা সেতু পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এ সড়কে যাতায়াতরত একাধিক যানবাহন চালক বলেন, বিগত বছরগুলোয় ঈদের সময়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ফিরতে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে আটকে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গত ঈদেও প্রায় ১৬ ঘণ্টা যানজট ছিল। আসছে কোরবানির ঈদেও নানা কারণে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি ও চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো গুরুত্বপূণ কারণ। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত এখনও সড়ক উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। পুলিশ যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে যানজট কম হবে। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান সারোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ঈদুল ফিতরে চার কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হয়। এবারের ঈদে নতুন করে আরও দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আাহসানুল কবির পাভেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন যত কম আসবে, দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকলের ঘটনা ততই কম হবে। এতে যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে। সেতুর পাশে যত যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকবে, ততই যানজটের লক্ষণ থাকে। এজন্য ভাঙতি টাকা দিয়ে টোল পরিশোধ করতে চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। এতে সেতুর টোল পরিশোধ করতে ভাঙতি টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তাছাড়া ঈদুল ফিতরের মতো এবারও টোলবুথ বাড়ানো এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোলবুথ স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্য সময়ের চেয়ে মহাসড়কে পশুবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে সেতু দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঈদুল আজহায় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গগামী সব যানবাহন এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত একমুখী করে দেওয়া হবে। অপরদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়া আসলে গোলচত্বর হয়ে ভূঞাপুর দিয়ে এলেঙ্গা সড়ক হয়ে ঢাকায় চলে যাবে। এতে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলো দুই লেনের সুবিধা পাবে।
তিনি আরও জানান, পশুবাহী ট্রাক ইতোমধ্যে চলাচল শুরু করেছে। এরমধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে মৌসুমী ফলের ট্রাকভর্তি গাড়ি ঢাকার দিকে যাচ্ছে। মহাসড়কে পরিবহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে পুলিশ মাঠে থাকে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
ছবি: জেলা প্রতিনিধি।