পূর্ণিমার জো-এর প্রভাবে উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আঁচড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। সৈকতের দোকানিরা বলেছেন, বছরের সবচেয়ে বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এই ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালীতে মেতে উঠেছেন পর্যটকরা। সৈকতে থাকা পর্যটকদের বার বার মাইকিং করে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সব বাধা উপেক্ষা করে পর্যটকরা বাঁধভাঙা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকেই উত্তাল সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ উপভোগ করছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা। হৈ-হুল্লোড় করছেন সৈকতের বালিয়াড়িতে। তবে অনেকে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে তীরে রাখা বেঞ্চিতে বসে উল্লাস করছেন। তবে উপকূলের আকাশে মেঘ থাকলেও প্রচণ্ড রোদ রয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনও বৃষ্টি হয়নি। বাতাসের চাপও নেই তেমন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিকে বঙ্গোপসাগর পূর্ণিমার জো-এর প্রভাবে উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরে এসে আঁচড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। এতে সৈকতে থাকা দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। গত তিন দিন ধরে সমুদ্রের বড় ঢেউয়ে সৈকত সুরক্ষা জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে খাল বিলসহ তলিয়ে গেছে উপকূলের নিম্ন এলাকা। উত্তাল সমুদ্রে নামতে পর্যটকদের ট্যুরিস্ট পুলিশ বার বার মাইকিং করে নিষেধ করলেও কোনও বাধা নিষেধ মানছেন না পর্যটকরা।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গতকাল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। নিম্নচাপটি বিদায় নিয়েছে। পূর্ণিমার জো-এর প্রভাবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্ণিমা শেষ হলে স্বাভাবিক হবে। তবে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকা থেকে আসা হাসান মাহমুদ বলেন, ছুটি কেন্দ্র করে কুয়াকাটা ঘুরতে এসেছি। তবে যে ঢেউ আশা করিনি, তার চেয়েও বড় বড় ঢেউ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।
পর্যটক ইশরাত জাহান বলেন, সমুদ্রের সৌন্দর্য তখনই ভালো লাগে, যখন বড় বড় ঢেউ কিনারায় আছড়ে পড়ে। আমি ঢেউ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে গোসল করতে নেমেছি। বড় বড় ঢেউয়ের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠছি।
কলাপাড়া পৌর শহরের বাসিন্দা বিউটি বেগম বলেন, আমাদের ঘর আন্ধারমানিক নদী সংলগ্ন। গত দুই দিন ধরে জোয়ারে সময় ঘরের মধ্যেও পানি ঢুকেছে। ঘরের সামনে পানিতে থই থই করছে। যার কারণে ভাটা হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘরেই থাকতে হচ্ছে। বাইরে নামতে পারছি না। এ ছাড়া পানি যখন বাড়ে, তখন আমাদের রান্নাবান্নাও বন্ধ থাকে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ছাতা বেঞ্চ ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে অনেক পানি বেড়েছে। যার কারণে জোয়ারের সময় আমাদের ছাতা বেঞ্চ সৈকত থেকে সরিয়ে রাখতে হয়েছে। এ সময় বেঞ্চ ভাড়া দেওয়া বন্ধ থাকে। এখানকার ডাব, আইসক্রিম ও আচার বিক্রেতাসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জোয়ারের সময় বিক্রি বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক শাকিল আনোয়ার বলেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গোসল করছি সমুদ্রে। বড় বড় ঢেউ, যা আগে দেখিনি। বেশ আনন্দ করছি। তবে পুলিশ বার বার মাইকিং করায় এবং পানির স্রোত বেশি থাকায় সৈকতের খুব কাছে থেকেই গোসল করেছি।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান জানান, সাগরে যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি বিদায় নিয়েছে। তবে পূর্ণিমার জোয়ের কারণে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্ণিমা শেষ হলে নদ-নদীর পানির উচ্চতা কমে যাবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন বলেন, পূর্ণিমার জো-এর প্রভাবে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল রয়েছে। তাই পর্যটকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। উত্তাল ঢেউ পেয়ে অনেক পর্যটক গোসলে মেতেছেন, সেজন্য আমরা মাইকিং করছি বার বার। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আমাদের টিম টহলে রয়েছে।