‘দিনমজুরির কাজ করে খাই। জায়গা-জমি নেই। পরের বাড়িতে থাকি। স্বপ্নেও ভাবিনি আমাকে উপহারের ঘর দেবে সরকার। একটা পাকা বাড়ি পেলাম। জীবনের শেষ দিনগুলো নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবো।’ এভাবেই কথাগুলো বলেছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইদ্রিস শেখের পাড়ায় অন্যের জমিতে বসবাস করা ফটিক মোল্লা (৬২)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা নদীর পাড়ে বসতবাড়ি ছিল ফটিক মোল্লার। একাধিকবার পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি ও স্বজনদের হারিয়েছেন। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয়েছে। সর্বশেষ বাড়িঘর ভাঙনের পর দৌলতদিয়া ইদ্রিস শেখের পাড়ায় অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেন। আপনজন বলতে কেউ নেই। এ অবস্থায় সরকারি ঘর পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে ফটিক মোল্লার।
ফটিক মোল্লার মতো অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন চলছে একই উপজেলার মোজাহার মোল্লা ও হারুন মোল্লার। তাদের বয়সও ষাটের ওপরে। একাধিকবার পদ্মার ভাঙনে তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্যের জায়গায়। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়। কোনো রকমে জীবনযাপন করলেও থাকার জায়গা ছিল না। অবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর পেয়েছেন তারা। পাকা ঘরে এখন শান্তিতে বসবাস করছেন।
তাদের মতো উপহারের ঘর পেয়েছেন এই উপজেলার ৫১০ পরিবার। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনতে কেউ শাকসবজি বিক্রি করছেন, কেউ দর্জির কাজ করছেন, মুদি দোকান দিয়েছেন, আবার কেউ চাষাবাদ করছেন, কেউবা করছেন হাস-মুরগি পালন। তাদের অধিকাংশই এখন স্বাবলম্বী। বাকিরাও স্বাবলম্বী হওয়ার সংগ্রাম করছেন।
ফটিক মোল্লা বলেন, ‘অভাবের সংসারে একাকী জীবন নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পাকা ঘর দিয়েছেন। এখানে এসে পেয়েছি আমার মতো আরও অসহায় ৬০ পরিবারকে। এখন একাকী মনে হয় না। শান্তিতে বসবাস করছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবসর সময়ে আমরা বয়স্ক ব্যক্তিরা পাকা ঘরের বারান্দায় বসে সময় কাটাই। গল্প করি, স্মৃতিচারণ করি। এভাবে সময় কেটে যায়।’
মোজাহার মোল্লা বলেন, ‘আমি কিছুটা অসুস্থ। এখানে এসে অনেক আপনজন পেয়েছি। বয়স্ক ব্যক্তিরা বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি। গ্রামে একসময় নিজের বাড়ির বারান্দায় বসে পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে সব হারিয়ে ঝুপড়ি ঘরে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। ঝুপড়ি ঘরে থেকে কখনও ভাবিনি পাকা ঘর পাবো, ওই ঘরের বারান্দায় বসে সময় কাটাতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে তা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহর কাছে শেখ হাসিনার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যেন আমাদের মতো সব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।’
হারুন মোল্লা বলেন, ‘উপহারের ঘরের পাশে লাউ গাছ ও বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করেছি। হাঁস-মুরগি পালন করছি। আমি এখন স্বাবলম্বী। এখানের বাসিন্দারা সুখে-শান্তিতে আছেন।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুল হক খান বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে গোয়ালন্দ উপজেলায় অসহায় ৫১০ পরিবারকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। উপহারের ঘরগুলো সুন্দরভাবে নির্মিত হয়েছে। অনেক ভেবেচিন্তে সঠিক জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুবিধাভোগীরা সুন্দর পরিবেশে বসবাস করছেন। সবাই ভালো আছেন।’
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেশের কোনও মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় রাজবাড়ী জেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গৃহহীনদের পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব গৃহহীনকে ঘর দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজবাড়ীর সব উপজেলার উপহারের ঘরগুলো সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। উপহারের ঘরগুলো আমি দেখেছি। এখন পর্যন্ত কোনও সুবিধাভোগী অভিযোগ করেননি। আমার বিশ্বাস, কেউ অভিযোগ করবে না। কারণ ঘরগুলো নির্মাণে কোনও ত্রুটি হয়নি।’