একজনের দেখাদেখি লটকনে ঝুঁকেছেন শতাধিক চাষি
বাংলাদেশ

একজনের দেখাদেখি লটকনে ঝুঁকেছেন শতাধিক চাষি

ঘন সবুজ পাতার ভেতরে ডালপালায় ঝুলছে অসংখ্য রসালো লটকন। কোনও গাছে সবুজ আবার কোনও গাছে কিছুটা হলুদ বর্ণের পাকা লটকন ঝুলছে। দেখে মুগ্ধ হবেন যে-কেউ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা ডা. আবুল অফা জাকারিয়ার লটকন বাগানের দৃশ্য এটি। সাত বছর আগে শুরু করে কম পরিশ্রম ও পরিচর্যায় চার বছরের মাথায় ফলন পেতে শুরু করেন। এ বছর তিনি তৃতীয়বারের মতো ফলন পেতে যাচ্ছেন। এবার একশটি লটকনের চারা থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার বাগান দেখে আশপাশের এলাকার শতাধিক চাষি ইতোমধ্যে লটকনের চাষ শুরু করেছেন। লটকন চাষিদের দাবি, আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা গ্রামটি ‘লটকনের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

পেশায় হোমিও চিকিৎসক আবুল অফা জাকারিয়া। একজন সফল চাষি হিসেবেও এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে। একখণ্ড জমিতে প্রায় দুই যুগের বেশি লেবু চাষ করেছেন। লেবুর ফলন ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে বিক্রি ভালো না হওয়ায় সাত বছর আগে জমি থেকে গাছ সরিয়ে ফেলেন। শুরু করেন লটকনের চাষ। নরসিংদী এলাকা থেকে লটকনের চারা সংগ্রহ করে পরিচর্যা শুরু করেন। চার বছরের মাথায় ৫শ কেজি লটকন উৎপাদিত হয়। পরের বছর ৭শ কেজি এবং চলতি বছর এক হাজার কেজি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।

স্থানীয় চাষি আবু ইউসুফ বলেন, ‘ডা. জাকারিয়ার বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে আমি নিজেও লটকনের বাগান করেছি। তালতলী এলাকায় লটকনের চাষ ভালো হয়। একসময় তালতলী গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হবে।’

কৃষিশ্রমিক রহমত আলী বলেন, ‘জাকারিয়া ভাইয়ের লটকন লাগানোর পর পরিচর্যায় রয়েছি। সার, ওষুধ সব আমি প্রয়োগ করেছি। গাছে লটকন ফলনের আগে আগে ডালপালা কাপড় দিয়ে ঘষামাজা করে দিই। এতে ভালো ফলন হয়।’

চাষি সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বাগানটা খুব সুন্দর। আমরা দেখতে আসি। এলাকা ও আশপাশের মানুষ অনেকেই দেখতে আসেন। অনেকে দেখে উৎসাহিত হয়ে বাগান করছেন। অনেকে ফলন তোলার পদ্ধতি সম্বন্ধেও জানতে আসেন।’

ডা. আবুল অফা জাকারিয়া বলেন, ‘লটকন গাছ লাগিয়ে খুব লাভবান হচ্ছি। ইতোমধ্যে একটি গাছ থেকে ২০ কেজি লটকন নামিয়ে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আরও ১৫ দিন পর লটকন পাকা পুরোদমে শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাত বছর আগে নরসিংদী এলাকা থেকে লটকনের চারা নিয়ে আসি। একশ চারা লাগিয়ে পরিচর্যা করি। এ বছর এক হাজার কেজি বিক্রি করতে পারবো। দিন যত যাবে ফলন তত বাড়বে। গাছ বড় করতে সময় ও পরিচর্যা করতে হয়। এরপর আর কোনও কঠিন পরিচর্যা নেই। কম পরিচর্যায় লাভবান হওয়া যায় লটকন চাষে। আমাদের এলাকায় লটকন চাষে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করা যায়, আগামীতে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যাবে। এ পর্যন্ত আমার দেখাদেখি কমপক্ষে একশ জন লটকনের বাগান করেছেন। আমার কাছ থেকে অনেকে পরামর্শ নেন। তারা বেশির ভাগ নরসিংদী থেকেই লটকনের চারা নিয়ে আসেন। পরিশ্রম কম হলেও নিয়ম অনুযায়ী বাগানের পরিচর্যা ও সার, কীটনাশক প্রয়োগ করলে ভালো ফলন আসে।’

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘শ্রীপুর লটকন চাষের জন্য উপযোগী। শ্রীপুরের কৃষকদের আমরা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা রোপণের জন্য পরামর্শ দিই। লটকন সুস্বাদু ফল। আমরা চাই এটির চাষ সম্প্রসারিত হোক।’

Source link

Related posts

কুষ্টিয়া ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ১৫ জনের মৃত্যু

News Desk

একসঙ্গে কেয়ার কোলজুড়ে এল পদ্মা, সেতু ও জয়

News Desk

অক্টোবরেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাবে ট্রেন

News Desk

Leave a Comment