এক আসনে এমপি হতে চান ১৫ জন, ছয়টিতে ৫৫
বাংলাদেশ

এক আসনে এমপি হতে চান ১৫ জন, ছয়টিতে ৫৫

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনে এবার মনোনয়নপত্র নিয়ে লড়াই শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একটি আসনে এমপি হতে ১৫ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। সর্বশেষে সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকালে বরিশাল-৫ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। এর ফলে একই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের সঙ্গে লড়াইয়ে যুক্ত হলেন তিনি।

তাদের পাশাপাশি বরিশাল জেলার বাকি পাঁচটি আসনে সাবেক ও বর্তমান সাত সংসদ সদস্যের সঙ্গে মনোনয়ন লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন নতুন ১০ জন। এর মধ্যে একজন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, একজন সাবেক সিটি মেয়র, দুই জন পৌর মেয়র এবং সাবেক-বর্তমান ছয় উপজেলা চেয়ারম্যান।

এদিকে, জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি তা নিয়ে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে চলছে আলাপ-আলোচনা। এক্ষেত্রে যে যার সমর্থক, তাকেই এগিয়ে রেখেছেন। 

তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত দেবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেবেন, তাকেই বিজয়ী করতে কাজ করবেন তারা। কোনোভাবেই এর ব্যত্যয় ঘটবে না। একই কথা বলেছেন ছয়টি আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

এবার বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এ কারণে এখানে কোনও ধরনের লড়াই ছাড়াই তার মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দলের স্থানীয় নেতারা।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, বর্তমান সংসদ সদস্য বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহে আলম, সংরক্ষিত আসনের এমপি সৈয়দা রুবিনা মীরা, ছাত্রলীগ নেতা আবিদ আল হাসান, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা, আবুল হাকিম সন্যামত, আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান খান, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম, পৌর চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র হালদার, মো. আনিসুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, এম মোফাজ্জেল হোসেন, আবিদ আল হাসান ও একে ফাইয়াজুল হক। ১৫ জনের মধ্যে কে দলীয় প্রতীক পান তার অপেক্ষায় আছেন নেতারা।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসন থেকে মনোনয়ন লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান আতিক, ফরচুন সুজ কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ড. মো. আমিনুল হক কবির, মো. শাফায়েত হোসেন, সাইদ আলম, আসাদুল হক, বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সরদার মো. মালেক হোসেন, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠু, জহির উদ্দিন, কিবরিয়া গোলাম, চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল ও বাবুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার খালিদ হোসেন স্বপন।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, হেমায়েত উদ্দিন খান, মেজর অব. নাসির উদ্দিন খান, শাহে আলম, তারিক বিন ইসলাম ও মেজর মো. মহসিন সিকদার।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, মশিউর রহমান খান, মো. আরিফ হোসেন আরিফিন মোল্লা, মোর্শেদা বেগম, সালাহ উদ্দিন রিপন, সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, এসএম জাকির হোসেন ও সাইদুল হক।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) ‍আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু, রাজিব আহমেদ তালুকদার, আব্দুল হাফিজ মল্লিক, বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম, শাহানারা পারভীন রানী, প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে পৈতৃক বাড়ি বরিশালে জাহাঙ্গীর কবির নানককে নিয়ে জোরেশোরে প্রচারণা চলছিল। তখন দলের নেতারা ভেবেছিলেন, হয়তো বরিশাল-১ কিংবা বরিশাল-২ ‍আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলবেন নানক। বিষয়টি সবার মুখে মুখে ছিল। এরই মধ্যে ঢাকা-১৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। তবে বরিশাল-৫ আসনটি নানা কারণে আলোচিত। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত দলের বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম এ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিনে জাহাঙ্গীর কবির নানকের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার খবরে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। যদিও নানক এর আগেও ঢাকা-১৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা-১৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছি আমি। এই আসনের ভোটার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কাজেই এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আমার জন্য কে বা কারা বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তা জানি না। ধারণা করছি, হয়তো আমার কোনও শুভাকাঙ্ক্ষী ফরম কিনেছেন। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা করেননি শুভাকাঙ্ক্ষীরা।’

সোমবার সিটি মেয়র আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহিদ ফারুক শামীম। এ সময় বরিশালের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে ছিলেন। নেতারা বলছেন, এই আসন থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় এবার নৌকার টিকিট পেতে ঘাম ঝরাতে শামীমকে। তবে শেষ পর্যন্ত কে দলের মনোনয়ন পাবেন, তা জানা নেই নেতাদের।

সোমবার সিটি মেয়র আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহিদ ফারুক শামীম

বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী বরিশাল-২ আসনে। এখানে বর্তমান ও সাবেক চার এমপিসহ ১৫ জন মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল-৩ আসন। এই আসনে সাবেক ও বর্তমান তিন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং চিত্রনায়ক রুবেলসহ ১৪ জন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল-৫ আসন। এখানে সাবেক সিটি মেয়র এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১০ জন রয়েছেন। এছাড়া বরিশাল-৬ আসনে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আট জন রয়েছেন মনোনয়ন যুদ্ধে। বরিশাল-৪ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন সাত জন।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-২ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক দুবারের এমপি তালুকদার মো. ইউনুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। এ কারণে প্রার্থীও বেশি। তবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেবেন। সভানেত্রী যাকে যে আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। এ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি হবে না।’

একই কথা বলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও বরিশাল-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আফজালুল করিম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। কিন্তু একটি আসনে প্রার্থী হবেন একজন। সেখানে কে নৌকার মাঝি হবেন, তা নিশ্চিত করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ মেনে আমরা দলের প্রার্থীর জন্যই কাজ করবো।’

Source link

Related posts

নাম ‘রোবো’ দাম ১০ লাখ

News Desk

১০০ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

News Desk

যমুনার চরে গাড়ল পালনে সফলতা, ঝুঁকছেন অনেকে

News Desk

Leave a Comment