উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট-সুনামগঞ্জের পর হবিগঞ্জেও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বন্যা পরিস্থিতি। কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি ঢুকেছে। দুর্গত এলাকায় ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে এখনও সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বানভাসি মানুষের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার (১৯ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত নবীগঞ্জ পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, উপজেলার প্রায় ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ, আউশকান্দি, বড় ভাকৈর পূর্ব, বড় ভাকৈর পশ্চিম, করগাঁও, কালিয়াভাঙ্গা, দেবপাড়া ও কুর্শি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এ অবস্থায় উপজেলায় ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানিতে তলিয়ে গেছে মাধবপুর, গালিমপুর, হোসেনপুর, আহমদপুর, দুর্গাপুর, কুমারকাদা, পাহাড়পুর গ্রাম।
স্থানীয় লোকজন বালুবর্তী বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। যেকোনও মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে কয়েকটি ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গালিমপুরের আকবর মিয়া বলেন, বন্যার পানি ঘরে ঢুকে গেছে, প্রায় হাঁটু সমান পানি। অসহায় অবস্থায় আছি, এখনও কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ জানান, বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জেলা প্রশাসককে চাহিদা জানানো হয়েছে। ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে আসা পানির জন্য খোয়াই, কালনী-কুশিয়ারাসহ হাওরে পানি বাড়ছে। এ ছাড়া জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য সরকারিভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীর বাঁধ রক্ষায় চার হাজার জিও ব্যাগ ও ১২ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ মজুত করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা জানান, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় ১৭১ টন চাল, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৭৮ বান্ডিল টিন মজুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৪২০ মেট্রিক টন চাল ৯টি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে মজুত রাখার জন্য। জেলায় এ পর্যন্ত ৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হবে।